ব্যবসা বাঁচাতে নিজেরাই নিজেদের সার্টিফিকেট ঝোলাচ্ছে অনেক রেস্তরাঁ

ভাগাড়-কাণ্ডের পর থেকে এমন ব্যানার ঝুলিয়েই বিরিয়ানি বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে ডানলপের একটি দোকান। তবে ওই রেস্তরাঁই শুধু নয়, এমন পন্থা নিয়েছেন শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের অনেক রেস্তরাঁ-মালিকই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ০৩:০৮
Share:

সোশ্যাল মিডিয়ার ছড়িয়ে পড়া বার্তার প্রতিবাদে শহরের দোকানে পড়েছে পোস্টার-ব্যানার। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

দোকানে ঢোকার মুখেই রাখা বড় অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি। তাতে ভর্তি বিরিয়ানি। ঠিক পিছনেই টাঙানো ওই বিরিয়ানি সম্পর্কে রেস্তরাঁর স্বঘোষিত ‘শংসাপত্র’!

Advertisement

ভাগাড়-কাণ্ডের পর থেকে এমন ব্যানার ঝুলিয়েই বিরিয়ানি বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে ডানলপের একটি দোকান। তবে ওই রেস্তরাঁই শুধু নয়, এমন পন্থা নিয়েছেন শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের অনেক রেস্তরাঁ-মালিকই। খাবারে পচা মাংস ব্যবহার হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, পুলিশে এমন অভিযোগ করেছেন তাঁরা। কেউ তা ছড়িয়ে দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, কেউ ভরসা রাখছেন পরিচিত খদ্দেরদের উপরে।

সব থেকে বেশি বিপাকে বিশেষ কিছু রেস্তরাঁ। অভিযোগ, সে সব রেস্তরাঁয় পচা মাংস মিলেছে বলে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুকে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে। সহজেই সেই বার্তা পৌঁছচ্ছে তরুণ প্রজন্মের কাছে। ফলে অনেকেই তাঁদের চেনা নামী রেস্তরাঁয় গিয়ে অন্তত মাংসের পদ অর্ডার করে রেস্ত খালি করতে চাইছেন না।

Advertisement

ওয়াটারলু স্ট্রিটের দু’টি রেস্তরাঁর এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের চিকেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদের চাহিদা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মাছ ও পনির চাইছেন।’’ তিনি জানান, ভেটকির একটি পদের চাহিদা গত কয়েক দিনে দ্বিগুণ হয়েছে। পার্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তরাঁর নামে ইতিমধ্যেই গুজব রটেছে পচা মাংস খাওয়ানোর। ওই রেস্তরাঁর ম্যানেজার বলছেন, ‘‘মাংসের কিছু পদের চাহিদা কু়ড়ি শতাংশ কমলেও চিংড়ি, মাছ, কাঁকড়ার চাহিদা বেশ বেড়েছে।’’

ডানলপের একটি বিরিয়ানির দোকানের ম্যানেজার সুমন ঘোষ জানান, কামারহাটি পুরসভার তরফে তাঁদের রেস্তরাঁ এবং কেন্দ্রীয় ভাবে বিরিয়ানি বানানোর জায়গায় হানা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দিন কয়েক পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি-সহ একটি পোস্ট দেখা যায়, যাতে বলা হয়েছে ওই রেস্তরাঁয় পচা মাংস মিলেছে। সুমন বলেন, ‘‘অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই অপরাধী তকমা দিলে তো ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়।’’ বাধ্য হয়ে ডানলপ-সহ শ্যামবাজার, পালপাড়া, সোদপুরে রেস্তরাঁর শাখাগুলিতে টাঙানো হয়েছে ব্যানার।

আবার তাঁদের সম্পর্কে অপপ্রচারের উৎস জানতে সটান লালবাজারে গিয়েছেন পার্ক স্ট্রিট ও শরৎ বসু রোডের একটি নামী রেস্তরাঁর কর্তারা। তাদের তরফে কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই রেস্তরাঁর নিজস্ব ফেসবুক পেজে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পুলিশে যাওয়ার বিষয়টি পোস্ট করা হয়েছে। যাতে সকলে জানতে পারেন, ওই রেস্তরাঁয় পচা মাংস মেলার খবরটি ভুয়ো।

মান বজায় রাখতে কী কী করতে পারেন রেস্তরাঁ মালিকেরা?

‘হোটেল অ্যান্ড রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র পূর্বাঞ্চলের সভাপতি সুদেশ পোদ্দার বলেন, ‘‘আমরা সকলকে প্রথমেই পরামর্শ দিয়েছি ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ছাড়পত্র ছাড়া কোনও জায়গা থেকে রান্নার সরঞ্জাম না নিতে। জিনিস সরবরাহকারী কোনও ফুড অডিট করিয়েছে কি না এবং তার তকমা আছে কি না, তা-ও দেখা দরকার।’’ এর পরেও যদি জিনিসের মান নিয়ে কোনও রেস্তরাঁর সন্দেহ হয়, তবে ল্যাবরেটরি থেকে তা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন