টিভিতে খবর দেখেই প্রবল তৎপরতা শুরু হয়ে যায় ইএম বাইপাস সংলগ্ন এক আবাসনে। দুপুরের মধ্যেই বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আবাসনের যেখানে যা সংস্কারের কাজ বাকি রয়েছে, তা বিকেলের মধ্যেই শেষ করে ফেলতে হবে। ওই বৈঠকেই আবাসিক সংগঠনের এক সদস্য জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই রেন পাইপ সংস্কারের কথা বলছে একটি পরিবার। যে কোনও দিন বিপদ ঘটে যেতে পারে। এর পরেই তড়িঘড়ি বিকেলের মধ্যে পাইপ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে।
আবাসন কমিটির সভাপতি শান্তনু কর বললেন, ‘‘বৃহস্পতিবারই তিনটি রেন পাইপ সারিয়ে ফেলেছি আমরা। বেশ কিছু দিন ধরেই ওগুলো সারানোর কথা চলছিল। আর তেমন কোনও কাজ বাকি নেই।’’ শান্তনুবাবুর দাবি, ‘‘অফিস থেকে ফিরে নিজেই ঘুরে ঘুরে সব দেখি। রেন পাইপের সমস্যা আমারও চোখে পড়েছিল।’’
এই রেন পাইপের একাংশ ভেঙে পড়েই সার্ভে পার্ক থানা এলাকার একটি আবাসনে বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে এক নিরাপত্তারক্ষীর। আবাসন কমিটির তরফে প্রথমে দাবি করা হয়েছিল, ঘটনাটি আত্মহত্যা। পরে অবশ্য ওই কমিটি মত বদলায়। জানা যায়, রেন পাইপ ভেঙেই মৃত্যু হয়েছে উমেশ ঠাকুর নামে ওই যুবকের। আবাসনগুলির সংস্কার ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, বা সেই কাজে কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে কি না, এই মৃত্যু সেই প্রশ্নই নতুন করে তুলে দিয়েছে।
এ দিন শহরের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি আবাসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেখানকার বাসিন্দারাই নিজেদের নিরাপদ মনে করেন না। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও আবাসন কমিটির সে দিকে নজর থাকে না। বরং দুর্গোৎসব এবং নানা বাৎসরিক অনুষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। উল্টোডাঙা মেন রোডের এক বহুতলের বাসিন্দা বললেন, ‘‘আমাদের আবাসন কমিটির এত জন মাথা যে, দীর্ঘদিন ধরে বলেও একটি পাইপ সংস্কার করানো যায়নি। মাসে রক্ষণাবেক্ষণের যে খরচ ওঠে, তা নিয়েই অনেক ক্ষেত্রে ঝামেলা লেগে যায়। যার জেরে কমিটিও ভেঙে যায় মাঝেমধ্যে।’’ সল্টলেকের নবনির্মিত এক বহুতলের বাসিন্দা অজয় সরকার আবার বলছেন, ‘‘ঘটনাটি শুনেছি। দিন কয়েক আগেই আমার ছেলে আবাসনের লনে খেলছিল। চারতলা থেকে একটি ফ্ল্যাটের শীতাতপ-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটাই ভেঙে পড়ে। কোনওমতে বেঁচে গিয়েছে।’’
বাইপাসের অন্য একটি আবাসনের এক বাসিন্দা জানালেন, সম্প্রতি সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের মাসিক খরচ বাড়ানো হয়েছে। জলের একটা সমস্যা ছিল, তা এখন মিটে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ফ্ল্যাটের উপরে চারতলা আর পাঁচতলার ফ্ল্যাট থেকে এসি-র জল পড়ছে। সেই জলে সিমেন্ট কেমন খয়ে যাচ্ছে। ভেঙে পড়লে কী হবে, সেটাই এখন বড় ভয়।’’ তবে প্রায় সব ক’টি আবাসন কমিটিই দাবি করেছে, সংস্কারের কাজে তাদের গাফিলতি থাকে না। যখনকার কাজ, তখনই করিয়ে নেওয়া হয়। বাইপাসের আর একটি আবাসনে আবাসিক কমিটির সভাপতি দুষ্মন্ত নাগ বললেন, ‘‘উৎসব এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের দু’টি আলাদা কমিটি রয়েছে। সর্বক্ষণ নজরদারিও চলে। সমস্যা হয় না। তা ছাড়া, ঘটনা ঘটে গেলে কারও কিছু করার থাকে না।’’
শুধু বেসরকারি নয়, বেহাল দশা শহরের সরকারি আবাসনগুলিরও। বেলেঘাটার একটি সরকারি আবাসনের বাসিন্দা এক বৃদ্ধ জানালেন, বিয়ে করেননি। একাই থাকেন। দিন কয়েক আগে ঘরের শৌচালয়ের উপরের ছাদ ভেঙে পড়েছে। এখনও তার সংস্কার হয়নি। রাজ্য সরকারের আবাসন দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, সরকারি আবাসনের বাসিন্দারা অভিযোগ জানালে কাজ করে দেওয়া হয়। যদিও এর আগে ক্রিস্টোফার রোডের এক সরকারি আবাসন রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারায় বাজারদরের থেকে অনেক কম দামে সেটি বেচে দেওয়া হয়েছিল।