Kolkata news

মায়ের দেহ ফ্রিজারে রাখা সেই শুভব্রত মানসিক বিকারগ্রস্ত নন, জানিয়ে দিল পাভলভ

অবশেষে হাসপাতালের রিপোর্টে জানা গেল, তিনি আদৌ অসু্স্থ নন। ইতিমধ্যেই শুভব্রতকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ১৮:০৬
Share:

শুভব্রত মজুমদার

বেহালার যে যুবকতাঁর মায়ের মৃতদেহ ফ্রিজারে রেখে দিয়েছিলেন, সেই শুভব্রত মজুমদার আদৌ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ নন! পাভলভ হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই এই তথ্য জানিয়েছেন।

Advertisement

২০১৫-র এপ্রিল মাসে বেহালা জেমস লং সরণির বাসিন্দা বীণা মজুমদারের (৮৪) মৃত্যু হয়। কিন্তু তার পরে বীণাদেবীর ছেলে শুভব্রত ফ্রিজারে রাসায়নিক দিয়ে মায়ের দেহ রেখে দেন। পুলিশকে জেরায় শুভব্রত জানিয়েছিলেন, মাকে বাঁচিয়ে তোলার আশায় তাঁর দেহ ফ্রিজারে রেখেছিলেন।ভবিষ্যতে মা বেঁচে উঠবেন, এই আশায় বিদেশের বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিচ্ছেন তিনি।

গত ৬ এপ্রিল বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই পুলিশ শুভব্রতকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

সে সময়েই প্রশ্ন ওঠে, শুভব্রত মজুমদার কি মানসিক বিকারগ্রস্ত? দীর্ঘ তিনবছর ধরে মায়ের মৃতদেহ ফ্রিজারে রেখে দেওয়ার নেপথ্যে মানসিক অবসাদই কাজ করেছিল, নাকি পেনশনের টাকা ভোগ করার জন্য ‘পরিকল্পনা’ করে দেহ রেখে দিয়েছিলেন তিনি?

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেইশুভব্রতর আচরণ নিয়ে বিভ্রান্ত ছিল পুলিশ। মাত্র একবার জেরার সুযোগ পেয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। রুশ ভাষায় কথা বলে পুলিশকে আরও বিপাকে ফেলেনশুভব্রত। শেষ পর্যন্ত বিভ্রান্তকর কথাবার্তা বলার জন্য জামিন পাওয়ার পরেও, চিকিৎসার জন্য তাঁকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

অবশেষে পাভলভ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানালেন, শুভব্রত সু্স্থ।তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত নন।সজ্ঞানেই তিন বছর ধরে মায়ের দেহ ফ্রিজারে রেখে দিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে হাসপাতালের রিপোর্টে জানা গেল, তিনি আদৌ অসু্স্থ নন। ইতিমধ্যেই শুভব্রতকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বেআইনিভাবে ঘরে মৃতদেহ রেখে দেওয়ার জন্য বেহালা থানায় শুভব্রতর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় জামিন পেয়ে যান তিনি। কিন্তু কীভাবে তিন বছর ধরে মায়ের পেনশন তুলেছিলেন, সেই তদন্ত এখনও চলছে।এ বিষয়ে নিউ আলিপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার সার্ভিস ম্যানেজার ডিপি গুহকে বেশ কয়েকবার জেরাও করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বেশ কিছু ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছিল। শুভব্রত হাসপাতালে থাকায়সেই ধোঁয়াশা কাটেনি। এবার শুভব্রতকে জেরা করে সেই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে চায় পুলিশ।

আরও পড়ুন: এক মাস আগের ভাঙা গাছ সরাবে কে, উদ্বেগ

আরও পড়ুন: ঘরে তরুণীর দেহ, স্বামী এবং দেওর পলাতক

এরই পাশাপাশি, ওই ব্যাঙ্কের তরফেও একটি অভিযোগ দায়ের হয় নিউ আলিপুর থানায়। সেখানে সরাসরি শুভব্রতর বিরুদ্ধেই প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করে ব্যাঙ্ক। সেই তদন্তও চলছে। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, এবার শুভব্রতর বিরুদ্ধে জালিয়াতির তদন্ত শুরু হবে। কারণ, তিনি সম্পূর্ণ সজ্ঞানেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরিকল্পনা করেই তিনি ঘরে মায়ের দেহ রেখেছিলেন। এক ব্যাঙ্ককর্মীর সাহায্যে মায়ের‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমাও দেন তিনি। ওই কর্মীর সহযোগিতা ছাড়া কোনওভাবেই পেনশন তোলা সম্ভব হত না। এবার দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে। তদন্তকারী অফিসারদের মত, ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা দিতে হলেতাঁকে সশরীরে ব্যাঙ্কে হাজির হতে হয়। যদি তিনি অসুস্থতার কারণে আসতে না পারেন, প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীকে বিষয়টি দেখতে হবে। সত্যিই অসুস্থ কিনা দেখতে, দরকারে বাড়িতে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক নিজের দায় এড়াতে পারে না।

সম্প্রতি শুভব্রতর পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে জানান, পাভলভে ছারপোকার আক্রমণে শুভব্রত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।তাঁর পায়ে ঘা হয়েছে।অবিলম্বে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হোক।আদালতে উপস্থিত ছিলেন শুভব্রতের মাসতুতো দিদি রুমা চক্রবর্তী।মঙ্গলবার তাঁর আইনজীবী তাপস ভট্টাচার্য আলিপুর আদালতের বিচারককে জানান, তাঁর মক্কেল পাভলভে ছা়রপোকার জ্বালায় অতিষ্ঠ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন