ঘাতক বাসটি। (ইনসেটে) বিজয়কুমার সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।
আইন ভাঙলে এ বার আর পুলিশের গাড়িকেও রেয়াত নয়। লালবাজার থেকে এমনটাই নির্দেশ গিয়েছে সব থানা এবং ট্রাফিক গার্ডের কাছে।
এত দিন পুলিশের গাড়ি কোনও ট্রাফিক আইন ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হত না। এমনকী, পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িও অপরাধ করে ছাড় পেয়ে যেত। এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একের পর অভিযোগ আসতে থাকায় লালবাজার থেকে কড়া নির্দেশ জারি হয়েছে। আর এই নির্দেশ মেলার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী পুলিশের গাড়ি চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। একটি ঘটনায় এক মোটরবাইক আরোহীর মৃত্যুর ঘটনার জেরে কলকাতা পুলিশের এক গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে লালবাজার।
পুলিশ জানায়, গত ১৮ মে সন্ধ্যায় পরমা উড়ালপুলের পশ্চিম প্রান্তে কলকাতা পুলিশের চতুর্থ ব্যাটালিয়নের একটি বাসের ধাক্কায় মারা যান এক মোটরকবাইক আরোহী। ওই ব্যক্তি মোটরবাইক চেপে কেষ্টপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন। প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশের বাসটিকে আটক করে চালক বরুণ আহেরিকে গ্রেফতার করে। প্রগতি ময়দান থানা ওই দুর্ঘটনা নিয়ে লালবাজারে যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই পুলিশের বাসটি বেআইনি ভাবে পার্ক সার্কাসের দিক থেকে পরমা উড়ালপুলে উঠেছিল। ওই উড়ালপুলে বাস চলাচলের অনুমতি নেই। তা সত্ত্বেও ওভারহেডের ‘হেডবারে’ বাধা পেড়িয়ে ফ্লাইওভারে উঠে পড়েছিল বাসটি। কিন্তু উ়ড়ালপুলের পশ্চিম প্রান্তে ধাপার কাছে নামার সময়ে পুলিশের বাসটি আটকে যায় পুলিশেরই দেওয়া ‘হেডবারে’। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরেও চালক বাসটিকে ওই ‘হেডবারে’র বাধা টপকাতে পারেননি।
লালবাজারে জমা পড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর পরেই বাসে থাকা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে, ইউ টার্ন নিয়ে পাশের লেন দিয়ে পার্ক সার্কাসের দিকে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চালক। ওই সময়ে পরমা ফ্লাইওভারের দু’টি লেন দিয়েই ই এম বাইপাসমুখী যান চলাচল করার কথা। তদন্তকারীদের দাবি, সে সব জানা সত্ত্বেও পুলিশের বাসটি ফের পার্ক সার্কাসের দিকে রওনা দেয়। সেই সময়ে উল্টো দিক থেকে মোটরবাইকে আসছিলেন কেষ্টপুরের বাসিন্দা বিজয়কুমার সিংহ (৪২)। পুলিশের বাসটির সঙ্গে দ্রুত গতিতে আসা বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিজয়বাবু মোটরবাইক থেকে মাটিতে পড়ে যান। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
লালবাজার জানায়, প্রথমে পুলিশের বাসের চালকের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু মোটরবাইক আরোহীর মৃত্যু হওয়ার পরে ওই চালকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ পার্ট ২ ধারায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যুর মামলা দায়ের করেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, ওই চালক জেনে-বুঝেই নিয়ম ভেঙে উড়ালপুলে উঠে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিছু না বললেও ওই দুর্ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে মৃত বাইক-আরোহীর পরিবার। বুধবার বিজয়ের ভাই অজয় সিংহ বলেন, ‘‘আদালতে যাওয়ার ব্যপারে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি আদালতে আবেদন করা হবে ক্ষতিপূরণের জন্য।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এর আগে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় শহরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মাস দুয়েক আগেই হেস্টিংস থানা এলাকায় পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মারা যান এক যুবক। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশের গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে এত কড়া ধারা প্রয়োগ করা হয়নি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরের রাস্তায় ট্রাফিক আইনভঙ্গকারী হিসেবে পুলিশের গাড়ির নাম রয়েছে। কিন্তু তা বলে একমুখী যান চলাচলের নির্দেশ মেনে মোটরবাইক আরোহীকে পিষে দেবে, তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। তাই জামিন অযোগ্য ধারাতেই ওই চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর এখন থেকে এমনটাই যে হবে, এই মর্মে আমরা সব থানা এবং ট্রাফিক গার্ডকে নির্দেশ দিয়েছি।’’