ছাত্র নিগ্রহে মূল অভিযুক্ত টিএমসিপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কায়ুম মোল্লা (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।
সেন্ট পলস-কাণ্ডে নিগৃহীত ছাত্রের বয়ান ঘিরে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হল। পুলিশের কাছে ওই ছাত্র দাবি করেছিলেন, গত ১৭ মে কলেজে তাঁকে নগ্ন করে নিগ্রহ করা হয়। এবং সেই দিন বৃ্ষ্টি পড়ছিল। দেরি হওয়ায় কলেজ থেকে বেরোতে পারেননি তিনি।
যদিও ১৭ তারিখের সঙ্গে বৃষ্টির কোনও সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। ওই দিন বৃষ্টিই হয়নি। তদন্তকারীদের দাবি, আসলে ঘটনাটি ঘটেছিল ১১ মে। তা হলে প্রশ্ন উঠছে, কেন ওই ছাত্র ‘ভুল’ তথ্য দিতে গেলেন?
নিগৃহীত ছাত্র এখন দাবি করছেন, “তারিখটা ঠিক মনে ছিল না। তাই ১৭ মে বলে দিয়েছিলাম।” যদিও তাঁর এই বয়ানের ভিত্তিতেই অভিযোগ দায়ের হয় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। ইতিমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছেন ৫ অভিযুক্ত।
আরও পড়ুন
খুনের সুপারি থেকে মাদকের কারবার, জেলবন্দি প্রেমিকের হয়ে ব্যবসা সামলান এই ছাত্রী!
নিগৃহীত ছাত্র দাবি করেছিলেন, অভিযুক্তরা ভিডিও তুলে ‘ভাইরাল’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তাই ঘটনার পরও সে মুখ খোলেননি। কিন্তু তদন্ত উঠে এসেছে, তাঁরই ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু এই ভিডিয়ো তোলেন। এ ক্ষেত্রেও ওই ছাত্রের বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
নিগ্রহীত ছাত্রের এই ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ার ছড়িয়ে পড়ে। দেখুন ভিডিয়ো
পুলিশের কাছে এখন সে জানাচ্ছে, ভিডিয়োতে ওই বন্ধু ছিল না, তাই নাম বলেননি। এখনেও তাঁর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মঙ্গলবার পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। তাঁরা জেরায় দাবি করেছেন, ওই দিন বৃষ্টিতে জামা-প্যান্ট ভিজে গিয়েছিল। কিছুটা মজার ছলেই ঘটনাটি ঘটে। এতে নিগ্রহের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন
এই বাঙালি কন্যাকে চিনে রাখুন, পরিচয় জানলে অবাক হবেন
কিন্তু প্রথম থেকে ওই ছাত্র ১৭ তারিখের ঘটনা বলে দাবি করে এসেছেন। সংবাদমাধ্যম, এমনকি পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার সময়েও তিনি একই কথা বলেন। তাঁর এই বয়ান বদলে সেন্ট পলস কলেজের আব্দুল কায়ুম মোল্লা, অর্ণব ঘোষের অনুগামীরা ফেসবুকে দাবি করেছেন, এটা একটা পরিকল্পিত চক্রান্ত।
এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে টিএমসিপির ইউনিট সভাপতি অর্ণব ঘোষের। কলেজ শিক্ষাকর্মী অনন্ত প্রামাণিক, কলেজ ছাত্র অভিজিৎ দলুই, বহিরাগত টিএমসিপি সদস্য শেখ ইনামুল হক এবং টিএমসিপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কায়ুম মোল্লার।
কলেজ ছাত্রদের মধ্যে একাংশ বলছেন, রাজ্যের এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ আব্দুল কায়েম। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতির পদের দাবিদার হিসাবে নাম উঠে আসছিল। তাঁর এই উত্থান আটকাতেই এই ‘ভিডিয়ো’কে হাতিয়ার করা হয়েছে।
যদিও এই যুক্তি মানতে না রাজ সেন্ট পলস কলেজে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সর্দার। তিনি বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। ওই সময় আমি ছিলাম না। ঝড়-জলের রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ওই ছাত্র।”
টিএমসিপি-র একাংশের দাবি, শিক্ষামন্ত্রীর কড়া বার্তার পর, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন ওই অভিযুক্তরা। বাঁচার জন্যই তাঁরা সন্দীপের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও লাভ হল না।
যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেন সন্দীপ। তাঁর দাবি, “তৃণমূলের কয়েক জন নেতা আমার নাম জড়ানোর চেষ্টা করছেন। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ফল সেন্ট পলসের ঘটনা।” বুধবার অভিযুক্তদের আদালতে পেশে করা হয়। বিচারক তাদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে নির্দেশ দেন।