প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কিন্তু তা আদৌ তা মানা হচ্ছে কি না, নজরদারি করার মতো পরিকাঠামো নেই ড্রাগ কন্ট্রোলের। ফলে শহর জুড়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দেদার বিকোচ্ছে ঘুমের ওষুধ। বরাহনগরও তার ব্যতিক্রম নয়।
সম্প্রতি বরাহনগরের বাসিন্দা এক যুবকের ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেশাগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা সামনে আসার পরে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। পুলিশ এ বার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি করা ঠেকাতে সাদা পোশাকের পুলিশ ক্রেতা সেজে হানা দেবে ওষুধের দোকানে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের ইচ্ছামতো ঘুমের ওষুধ খেয়ে সারাদিন নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন বছর পঁচিশের ওই যুবক। বাড়ির লোক তাঁকে বারবার বোঝালেও কোনও লাভ হয়নি। কয়েক মাস আগে ঘুমের ওষুধের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় অচৈতন্য হয়ে পড়েন ওই যুবক। আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। বেশ কিছু দিন চিকিৎসার পরে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এর পরে ওই যুবক নিজেই পরিজনেদের জানান, কী ভাবে বিভিন্ন দোকান থেকে তিনি মুঠো মুঠো ঘুমের ওষুধ জোগাড় করতেন। ওই যুবকের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ও নিজেই জানায়, স্থানীয় কয়েকটি দোকানে গিয়ে ঘুমের ওষুধ কিনে আনত। কোনও দোকানদার কখনওই এর জন্য প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইতেন না।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, যুবকের বক্তব্য খতিয়ে দেখতে ওই আত্মীয় এলাকার কয়েকটি ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঘুমের ওষুধ কেনেন। এর পরেই তিনি বরাহনগর থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান। এমনকী ওই যুবকও লিখিত ভাবে পুলিশকে বিষয়টি জানান। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ দোকানের মালিকদের ডেকে সতর্কও করে। কিন্তু তার পরেও একটি দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই মিলছিল ঘুমের ওষুধ। বিষয়টি ফের বরাহনগর থানা ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের জানান ওই যুবকের পরিজনেরা। এর পরেই ওই দোকান মালিককে ডেকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরাহনগর থানার আধিকারিকেরা। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনও ভাবেই ঘুমের ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। এটা যে বা যাঁরা মানবেন না, তাঁদের কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে।’’
কোনও দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে নজরদারি চালানোর কথা ড্রাগ কন্ট্রোলের। কিন্তু বরাহনগরের এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয়, সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে কোনও নজরদারিই ছিল না। ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা জানিয়েছেন, বিছিন্ন ভাবে এমন কিছু অভিযোগ তাঁদের কাছে আসছে। কিন্তু পরিকাঠামোর সমস্যা থাকায় তাঁদের হাত-পা বাঁধা। বেঙ্গল কেমিস্ট ও ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সহ সভাপতি অজিত মজুমদার বলেন, ‘‘এটা পুরো বেআইনি কাজ। কোনও দোকান মালিকই এটা করতে পারেন না। সংগঠনের সদস্যদের ফের সচেতন করা হবে।’’
বরাহনগরের চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘বিষয়টি সবে শুনলাম। এটা কখনই চলতে পারে না। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে আমরাও নজর রাখব। নিয়ম বর্হিভূত কাজ কেউ করতে পারবেন না।’’