রিল-উপদ্রবের বিরুদ্ধে কি কোনও পদক্ষেপ করবে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ? ছবি: সংগৃহীত।
কপালে দইয়ের ফোঁটা, হাতে নোটসের খাতা। স্কুল ইউনিফর্মে থাকা ছাত্রী মেট্রোয় চেপে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে ঝালিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার পাশে বসে তারস্বরে রান্নার রিল দেখে চলেছেন প্রবীণা। কলকাতা মেট্রোয় এই দৃশ্য অবাক করার মতো নয়। এরকম ঘটনা রোজই ঘটছে। কেউ না কেউ করেন বা সয়ে থাকেন! শুধু কলকাতা কেন, যে কোনও দেশের মেট্রো, ট্রেন, বাসে এই ছবি আকছার দেখা যায়।
লন্ডনের পরিবহণ সংস্থা (টিএফএল) সম্প্রতি এই নিয়ে পদক্ষেপ করেছে। সমাজমাধ্যমে, লন্ডন টিউবের বিভিন্ন স্টেশনে পোস্টার দিয়ে তারা প্রচার শুরু করেছে, মোবাইল স্পিকার নয়, গণপরিবহণে যাতায়াতের সময়ে গান শোনা, গেম খেলা, ভিডিয়ো দেখা এবং ফোনে কথা বলার সময় হেডফোন ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় জরিমানার ব্যবস্থাও করা হতে পারে। কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ কি এ ধরনের পদক্ষেপ করার বিষয়ে কোনও চিন্তাভাবনা করছেন? সেই প্রশ্নও উঠেছে।
মেট্রোর কামরায় উঠলে বিভিন্ন ভাষায় গান থেকে সিনেমার সংলাপ— কানে আসবে সবই। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, অশ্লীল কথাবার্তা চলছে, এমন রিলও অবলীলায় বসে দেখেন সহযাত্রীরা। এক তরুণীর অভিযোগ, এ হেন মানুষজন বুঝতেও পারেন না যে, তাঁর সহযাত্রীর এতে অস্বস্তি হতে পারে। এমনকি, এই নিয়ে আপত্তি করলে অনেকেই পাল্টা দু’-চার কথা শুনিয়েও দেন। ওই তরুণীর অভিযোগ, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে সহযাত্রীরাও কোনও প্রতিবাদ করেন না। উল্টে বলেন, রিল দেখলে অসুবিধা কোথায়? আপনার সমস্যা থাকলে কানে তুলো গুঁজে থাকুন।’’ মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্যও অনেকটা সে রকমই। তাঁরা আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন, এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাননি।
তবে লন্ডন টিউবের ছবিটা অন্য রকম। অনেক যাত্রীই বিরক্ত হয়ে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছেন। টিএফএল একটি সমীক্ষা করে যাত্রীদের মধ্যে। প্রায় ১০০০ জন যাত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, সহযাত্রীরা উচ্চস্বরে টিউব, বাস বা ট্রেনে সিনেমা বা রিল দেখলে, গান শুনলে তাঁরা বিরক্ত হন কি না! ৭০ শতাংশ যাত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা ভয়ানক বিরক্ত হন। বিষয়টি তাঁদের কাছে ‘উপদ্রবের’ মতো। তার পরেই চলতি সপ্তাহে এলিজ়াবেথ লাইনের বিভিন্ন স্টেশনে পোস্টার দিয়েছেন টিউব কর্তৃপক্ষ। সেখানে যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে, টিউবে মোবাইলে কিছু দেখতে বা শুনতে হলে হেডফোন ব্যবহার করতে হবে। বাস বা ট্রেনের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হতে চলেছে। প্রয়োজনে এক হাজার পাউন্ড জরিমানার সংস্থানও রয়েছে। তবে টিএফএল জানিয়েছে, জরিমানা সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে দেখছে তারা।
টিএফএল-এর এই পদক্ষেপের পরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যাত্রীরা জানিয়েছেন, টিউবে জোরে গান শোনা, সিনেমা দেখা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এক যাত্রীর কথায়, ‘‘টিউব সফরে আমার কানে গান বা সিনেমার সংলাপ এলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু অনেকেরই হতে পারে। কেউ কেউ খুব ক্লান্ত থাকেন। একটু ঘুমিয়ে নিতে চান। তাই টিএফএলের এই পদক্ষেপ একেবারেই সঠিক।’’ অটিজ়ম রয়েছে, এমন যাত্রীদেরও জোরে শব্দে অনেক সময় সমস্যা তৈরি হয়।
টিএফএল-এর উপভোক্তা ডিরেক্টর এমা স্ট্রেন জানিয়েছেন, সংস্থার ‘বাই ল’ অনুসারে, টিউবে অনুমতি ছাড়া জোরে গান বাজানো বা রিল দেখা এমনিতেই নিষিদ্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘যাত্রীদের এ সব করতে দেখলে হস্তক্ষেপ করেন আধিকারিকেরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরা মেনেও নেন। তবে কথা না শুনলে পদক্ষেপ করা যেতে পারে। তাঁকে টিউব থেকে নেমে যেতে বলতে পারেন অফিসার।’’
ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্সের নান্তে স্টেশনে মোবাইলের লাউডস্পিকার অন করা কথা বলার জন্য এক ব্যক্তি ২০০ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ২০ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়েছিল। ফরাসি পরিবহণ বিধি অনুসারে, কেউ গণপরিবহণে জোরে গান চালিয়ে অন্যকে বিরক্ত করলে তাঁকে জরিমানা করা যেতে পারে।
কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ কি এ রকম পদক্ষেপ করবেন? আনন্দবাজার ডট কমকে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘লন্ডনে যা প্রযোজ্য, আমাদের ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে পারে না। অভিযোগ এখনও পাইনি, পেলে খতিয়ে দেখব। কেউ করেছে বলে আমাদের করতেই হবে, এরকম তো বাধ্যবাধকতা নেই।’’