রাতের অবৈধ পার্কিং। ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
রাত ১০-৩০: রোগী নিয়ে দ্রুত গতিতে আসছিল একটি অ্যাম্বুল্যান্স। গলি থেকে বেরিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে (চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ) উঠতে গিয়ে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে বাঁচল। কারণ, গলির মুখে অনেকটা জুড়ে তিনটি ট্রাক, দু’টি গাড়ি ও দু’টি ম্যাটাডর পার্ক করা ছিল।
রাত ১০-৩৫: সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের দু’পাশে দাঁড়িয়েছিল কয়েকটি মালবোঝাই ট্রাক ও ম্যাটাডর। বাস পেতে প্রায় মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন কয়েক জন যাত্রী। এক জনের পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল দ্রুত আসা একটি ট্যাক্সি।
রাত ১১-১৫: দমদমের সমর সরণির বাসিন্দা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী অদিতি রায়। বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। প্রায় প্রতি দিনই গলিতে অফিসের গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়। কারণ, গলির মুখে আটকে দমদম রোড জুড়ে অনেক ট্যাক্সি পার্ক করা থাকে। গলির মুখে নেমে হেঁটে বাড়ি ঢুকতে হয় অদিতিদেবীকে।
এমনই ভাবে রাতে উত্তর কলকাতার নানা জায়গায় গাড়ি পার্ক করা থাকে। যেমন, রাতে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরে সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের সামনে, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিপরীতে বেশ কিছু ট্রাক, ম্যাটাডর, গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। রাতু সরকার লেনে ঢোকার মুখে, মতিলাল শীল ফ্রি কলেজের সামনে, মহাত্মা গাঁধী রোড মেট্রো স্টেশনের সামনে, মহাজাতি সদনের বিপরীতে রাতে নিয়মিত বেশ কিছু লরি, ম্যাটাডর, গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এই পার্কিং বেআইনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আরতি গুপ্ত সরণির কাছে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরে বিক্ষিপ্ত ভাবে গাড়ি পার্ক করা থাকে। রামচন্দ্র মৈত্র লেনের সামনে বড় বাস, বোস পাড়া লেনের সামনে মিনিবাস, ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউয়ের দু’পাশে প্রায় ৫০টি বেসরকারি রুটের বাস এবং কাশীপুর ক্লাব সংলগ্ন দমদম রোডের দু’পাশে অসংখ্য ট্যাক্সি পার্ক করা থাকে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তায় পার্কিয়ের জায়গা স্থির করা হয়।
পুরসভার পার্কিং বিভাগের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরে দিন বা রাতে পার্কিংয়ের কোনও অনুমোদন নেই। এমনকী ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ অ্যাভিনিউ এবং দমদম রোডের উপরেও পার্কিংয়ের কোনও অনুমতি নেই। এ দিকে পথচারী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনকে এ বিষয়ে বার বার জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার বলেন, “অবৈধ পার্কিং দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। পুরসভার কোনও ভূমিকা থাকে না।” ডি সি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “রাতের অবৈধ পার্কিং রুখতে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু শহরে পার্কিংয়ের যথেষ্ট জায়গা না থাকায় এ ধরনের পার্কিং রুখতে কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। এক জায়গা থেকে সরালে চালকেরা অন্য জায়গায় গাড়ি রাখতে শুরু করেন।”