ধর্মঘটে ‘শান’ দিতে বাম হাতিয়ার কুইজ, এনআরবি

নতুন কৌশলে ধর্মঘটের প্রচার করতে যুবদেরই সামনে রেখেছেন বাম নেতৃত্ব।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৩
Share:

ছবি পিটিআই।

পতাকা-পোস্টার নিয়ে সাধারণ মিটিং-মিছিল আছে। কিন্তু তাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে যুগের সঙ্গে তাল রাখতে এ বারের সাধারণ ধর্মঘটের আগে জনমত গড়তে নানা অভিনব কৌশল নিচ্ছে বামেরা। বাজারের পরিভাষায় যাকে ‘রাজনৈতিক বিপণন’ বলছেন অনেকে।

Advertisement

নতুন কৌশলে ধর্মঘটের প্রচার করতে যুবদেরই সামনে রেখেছেন বাম নেতৃত্ব। বামপন্থী যুব সংগঠনের আয়োজনেই শিয়ালদহের মতো বড় স্টেশনে বসানো হচ্ছে কুইজের আসর। কেন সাধারণ ধর্মঘট, এক দিন ধর্মঘট করে লাভ কী, ধর্মঘট করে সনস্যার সমাধান হয় কি না— সাধারণ মানুষের এমন নানা জিজ্ঞাসার উত্তর সেখানে থাকবে। আবার মানুষের উদ্দেশেও থাকবে পাল্টা প্রশ্ন— জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার বাতাবরণ বা অর্থনীতির বেহাল দশা তাঁরা সমর্থন করছেন কি না? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘মিটিং বা মিছিলে একমুখী প্রচার হয়। মানুষের মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে পারলে অনেক কার্যকরী ভাবে নিজেদের বক্তব্য তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।’’

ধর্মঘটের উপলক্ষে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচিও থাকছে বাম যুবদের ব্যানারে। যেমন, এনআরসি-র জবাবে বাম যুবদের হাতিয়ার হতে চলেছে এনআরবি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ বেরোজগার)। রাজ্য জুড়ে কর্মহীন যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে চাকরির প্রতীকী আবেদনপত্র নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযান করেছিল বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলি। এ বার কর্মহীনদের নামের তালিকা তৈরি করে গন্তব্য দিল্লি। সিপিএম সূত্রের খবর, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে জমায়েত করার আগে রাজ্যের সর্বত্র এনআরবি-তে নাম সংগ্রহ করা হবে। সেই সঙ্গেই বাম যুব নেতৃত্ব দাবি তুলবেন বেকারত্ব বিলোপ আইন চালু করার। তাঁদের যুক্তি, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করা বা ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার নীতি চালু করার জন্য আইন সংশোধনে ব্যস্ত না থেকে নরেন্দ্র মোদীর সরকার তরুণ প্রজন্মের রোজগারের অনিশ্চয়তা দূরীকরণের দায়িত্ব নিক। এক বাম যুব নেতার মন্তব্য, ‘‘বিজেপি বলে, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’! তা হলে বেরোজগারি বিলোপ করাও সম্ভব। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেখান মোদী!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: আধারের জন্য সারা রাত লাইনে ১১ হাজার

অর্থনীতিতে মন্দা, শিল্পের বেহাল দশা, গ্রামীণ অর্থনীতির সঙ্কটের পাশাপাশি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র বিরোধিতাও আগামী ৮ জানুয়ারি সাধারণ ধর্মঘটের বিষয়। সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে আগের ব্রিগেড সমাবেশের মতো এ বার ধর্মঘটের স্লোগান-পোস্টারের জন্যও জনতার মত চাওয়া হয়েছিল। জমা পড়া পোস্টার-স্লোগান থেকে কিছু বাছাই করে ব্যবহার শুরু করেছেন সিটু এবং সিপিএম নেতৃত্ব। নতুন পোস্টার বা স্লোগান বেঁধে দেওয়ার কাজে ছাত্র-ছাত্রীদের অবদানই সব চেয়ে বেশি। একটি কার্টুনে যেমন ডিম (এনপিআর বোঝাতে) ও মুরগি (এনআরসি-র জন্য) রেখে বলা হচ্ছে, ‘দু’টো একদম আলাদা, কোনও সম্পর্ক নেই’! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মতে, ‘‘সত্যকে সহজ করে বলা কঠিন। কারণ, সত্য যে কঠিন! আবার সহজ করে বলাটাই যথেষ্ট নয়, যদি তা মনে গভীর ছাপ ফেলতে পা পারে। এ কাজে তরুণ প্রজন্মের উপরে নির্ভর করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন