Coronavirus Lockdown

WB Lockdown: কোথাও হাতজোড়, কোথাও রক্তচক্ষু, কড়া পুলিশি নজরদারিতে রাজ্য জুড়ে লকডাউন

লকডাউনের প্রথম দিনে পুলিশি কড়াকড়ির বেড়াজাল কেটে বেরোতে অনেককেই নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২১ ১৫:৪২
Share:

হাওড়া ব্রিজে পুলিশের নাকা তল্লাশি। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যে ১৫ দিনের লকডাউনের প্রথম দিনেই টের পাওয়া গেল পুলিশি কড়াকড়ি। উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ লকডাউন পালনে সর্বত্রই জারি কড়া নজরদারি। লক্ষ্য, করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে দেওয়া।

Advertisement

রবিবার সকাল থেকেই হাওড়া ব্রিজ-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে নাকা তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। জরুরি পরিষেবায় যুক্ত ব্যক্তি ছাড়া যাঁরা পথে নেমেছিলেন তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে হাওড়া স্টেশনে সকালে দূরপাল্লার ট্রেনে নামা যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন বাস এবং ট্যাক্সি না পেয়ে। পরে অবশ্য হাওড়া সিটি পুলিশের উদ্যোগে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয় তাঁদের জন্য।

হাওড়ার মতো রবিবার লকডাউনের প্রথম দিন হুগলিও ছিল শুনশান। সকালে দোকান বাজার খুললেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়নি। চুঁচুড়ার খরুয়াবাজার, চকবাজার, রবীন্দ্রনগর বাজার, মল্লিক কাশেম হাট, ব্যান্ডেল বাজার চন্দননগর বৌ বাজার, শেওড়াফুলি বাজার, শ্রীরামপুর টিন বাজার, উত্তরপাড়া সখের বাজার— সর্বত্রই ছবিটা একই। হুগলির জুটমিলগুলিতে ৩০ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ হয়েছে। জেলা জুড়ে বন্ধ গণ পরিবহণ। তবে রাস্তায় হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি গাড়ি দেখা গিয়েছে। যদিও, মোড়ে মোড়ে জারি ছিল পুলিশের নাকা তল্লাশি।

Advertisement

নির্জন চুঁচুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘড়ির মোড়। নিজস্ব চিত্র।

লকডাউনের প্রথম দিনে পুলিশি কড়াকড়ির বেড়াজাল কেটে বেরোতে অনেককেই নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছে। জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত এমন ভুয়ো স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে অনেকে রাস্তায় নেমেছিলেন। এ দৃশ্য দেখা গিয়েছে, বারাসতের চাঁপাডালি মোড়ে। তবে হাসপাতালের ভুয়ো স্টিকার লাগানো ওই গাড়ি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। সকাল ১০টা বাজতেই পুলিশ নামে দেগঙ্গা বাজারে। বিনা কারণে রাস্তায় যাঁরা নেমেছিলেন তাঁদের ধরপাকড়ও করা হয়। এমন ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামেও এক দৃশ্য। রবিবার লকডাউনের প্রথম দিনেই সময়ের আগে জামাকাপড়ের দোকান খোলায় দাঁতন এলাকায থেকে দুই ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। খড়্গপুর, ঘাটাল-সহ মেদিনীপুর সদর মহকুমা এলাকাতেও নজরে আসে পুলিশি তৎপরতা।

লকডাউনের প্রথম দিন বিধি উড়িয়ে রাস্তায় বার হওয়ার অপরাধে জেলা জুড়ে দেড়শোর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুরুলিয়া পুলিশ। জেলার ২৩টি থানা এলাকায় মোট ১৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মামলা রুজু হয়েছে।

অশোকনগরে পুলিশের ধরপাকড়। নিজস্ব চিত্র।

আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেও দেখা গিয়েছে তেমন ছবি। তবে হাওড়ার মতো আসানসোল এবং দুর্গাপুরেও সমস্যায় পড়েছেন দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীরা। তবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অটো এবং টোটোকেও রাস্তায় নামতে দেওয়া হয়নি। এর মধ্যেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দোকান খোলা রাখার ঘটনায় আসানসোল দক্ষিণ থানার মহিশীলা কলোনিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। রবিবার লকডাউনের প্রথম দিন, রানিগঞ্জেও ছিল কড়া পুলিশি নজরদারি।

রবিবার বীরভূমে দুই ভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছে। সকাল ১০টা বাজতেই বোলপুর চৌরাস্তা এলাকায় দোকানপাট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও বোলপুর হাটতলা সবজিবাজার এবং সিউড়ি টিনবাজার সবজি বাজার খোলা থাকতে দেখা যায়। তবে বীরভূম সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড সীমানায় পুলিশিরে কড়া নজরদারি রয়েছে। সকাল থেকে বন্ধ সরকারি এবং বেসরকারি বাস পরিষেবাও।

রবিবার সকাল থেকেই মুর্শিদাবাদের কান্দি বাসস্ট্যান্ডে নাকা তল্লাশি চালান পুলিশকর্মীরা। জনসাধারণ যাতে অযথা বাইরে না বেরোন, সে জন্যও করা হয় প্রচারও।

দেগঙ্গায় পুলিশের প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণবঙ্গের ছবি দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গেও। অতিমারির মোকাবিলায় রবিবার সকাল ১০টা বাজতেই রাস্তায় নামে বালুরঘাট থানার পুলিশ। বালুরঘাট থানার আইসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। নির্দিষ্ট সময়ের পরেও খোলা থাকা দোকানগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। জরুরি কাজ ছাড়া রাস্তায় নামাতে দেওয়া হয়নি জন সাধারণকেও।

নিয়ম মাফিক, জলপাইগুড়ি জেলার অধিকাংশ চা বাগানেই স্বাভাবিক কাজকর্ম চলেছে রবিবার। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ শ্রমিকদের নিয়ে হয় কাজ। ডুয়ার্সের কাঁঠালগুড়ি, নিউ ডুয়ার্স, চামুর্চি, রেড ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক চা বাগান খোলা ছিল। গয়েরকাটা চা বাগানে রবিবার সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় তা অবশ্য বন্ধ রাখা হয়। চা বাগান মালিক সংগঠন ডিবিআইটিএ-র সম্পাদক সঞ্জয় বাগচি বলেন, ‘‘আমরা গত ৫ মে থেকেই প্রতিটি বাগানে ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কাজকর্ম চালাচ্ছি। ভিড় এড়াতে শিফট টালু করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা হচ্ছে।’’

বালুরঘাটে দোকান বন্ধ করতে বাজারে পুলিশের মাইকিং। নিজস্ব চিত্র।

কোচবিহারেও সকাল ১০টা বাজতেই অভিযানে নামে জেলা প্রশাসন। পুলিশ কোচবিহার শহরের ভবানীগঞ্জ বাজার, রেলগেট বাজার, নতুন বাজার-সহ বিভিন্ন বাজারগুলি বন্ধ করে দেয়। বিনা প্রয়োজনে যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, তাঁদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement