Mamata Banerjee

উত্তরবঙ্গ থেকে জিতেন্দ্রকে ফোন দিদির, মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ

জিতেন্দ্র এখনও তাঁর সরকারি নীলবাতির গাড়ি ব্যবহার করছেন না। নিজস্ব গাড়িতেই ঘুরছেন এবং অনুগামীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:০৯
Share:

জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারির ক্ষোভ প্রশমিত করতে তাঁকে ফোন করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে মমতা জিতেন্দ্রকে ফোন করে বলেন, তিনি নিজে পুরো বিষয়টি দেখছেন। সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। জিতেন্দ্রকে মমতা আরও নির্দেশ দেন, তিনি যেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছাড়া কলকাতায় কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলেন।

Advertisement

এর আগে বুধবার সকালে একটি প্রকাশ্য সভায় জিতেন্দ্র বলেছিলেন, আপাতত তৃণমূলের কোনও সভা বা শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকে তাঁকে দলের পক্ষ থেকে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি যে জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ ছাড়তে তৈরি, তা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘সিদ্ধান্তি নিয়েছি, বললে চলে যাব। কিন্তু মানুষের সঙ্গেই থাকব।’’ মানুষের কাছে তাঁকে ‘প্রতিশ্রুতি এবং দায়বদ্ধতা’ পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়ে জিতেন্দ্র বলেছিলেন, তাঁকে আর ‘ভয় দেখিয়ে’ রাখা যাবে না। তাঁর প্রকাশ্য ঘোষণা, ‘‘এক সময়ে তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে! আর ভয় দেখিয়ে রাখা যাবে না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বললে চলে যাব। কিন্তু মানুষের সঙ্গেই থাকব। মানুষের বাইরে তো আর থাকতে পারব না!’’

জিতেন্দ্র যখন ওই কথা বলছেন, তখন মমতা কোচবিহারে। জিতেন্দ্র তার পরে চলে যান আসানসোল পুরসভবনে। সেখানে তিনি ২৫টিরও বেশি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। পাশাপাশিই ঘোষণা করেন, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটে নাগাদ তিনি পুরসভার সমস্ত কর্মী এবং আধিকিরিকদের সঙ্গে দেখা করবেন। তখনই জল্পনা ছড়ায় যে, জিতেন্দ্র পুর প্রশাসকের পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন। ঘটনাচক্রে, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কোচবিহার থেকে মমতা ফোন করেন জিতেন্দ্রকে। তিনি সরাসরিই জিতেন্দ্রকে বলেন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে। তিনি সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন। জিতেন্দ্রর ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘দিদি বলেছেন, তিনি নিজে ব্যাপারটা দেখছেন। তিনি বিষয়টা বুঝে নেবেন। এর মধ্যে দাদার যদি কোনও সমস্যা হয়, তা হলে তিনি যেন একমাত্র মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। অন্য কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে যেন কথা না বলেন।’’

Advertisement

সূত্রের খবর, জিতেন্দ্র মমতাকে বলেন, তিনি মাথা ঠাণ্ডা রাখবেন। কিন্তু পাশাপাশিই তিনি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের নামে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, গত তিন বছর ধরে আসানসোলের জন্য কোনও অর্থ মঞ্জুর করা হচ্ছে না। আসানসোল পুর এলাকা যে রাজস্ব বা অন্য খাতে যে অর্থ রাজ্য পুর দফতরকে দেওয়া হয়, তার অর্ধেকও আসানসলের উন্নতির জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।

মমতা তখনও তাঁকে বলেন উত্তেজিত না হতে এবং অরূপ ছাড়া অন্য কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা না বলতে। তখনকার মতো জিতেন্দ্র দলনেত্রীর পরামর্শ মেনেও নেন। প্রসঙ্গত, শুক্রবারই জিতেন্দ্র সঙ্গে মমতার বৈঠকে বসার কথা। মমতার সঙ্গে কথা বলার পর স্পষ্টতই জিতেন্দ্রকে খানিকটা টেনশন মুক্ত দেখিয়েছে। তবে জিতেন্দ্র এখনও তাঁর সরকারি নীলবাতির গাড়ি ব্যবহার করছেন না। নিজস্ব গাড়িতেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন এবং অনুগামীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।

তৃণমূলের বিধায়ক হয়েও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক কারণে’ কেন্দ্রীয় অনুদান থেকে আসানসোলকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলেছিলেন জিতেন্দ্র। মন্ত্রী ববিকে ওই মর্মে জিতেন্দ্র চিঠি পাঠানোর পর সোমবার থেকেই চাপানউতোর শুরু হয়। সমস্যা মেটাতে শীর্ষ নেতৃত্ব মঙ্গলবার কলকাতায় ববির সঙ্গে জিতেন্দ্রকে বৈঠকে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক হয়নি। জিতেন্দ্র প্রথমে রাজি হলেও পরে বেঁকে বসেন। জানা যায়, একমাত্র মমতার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার জিতেন্দ্র জানিয়েছিলেন, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর যা কথা হয়েছে, তাতে উত্তরবঙ্গ সফর সেরে মমতা বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফেরার পর ১৮ তারিখ অর্থাৎ শুক্রবার তাঁকে ডাকা হতে পারে। কিন্তু সেই ডাকের আগেই বুধবার রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেছিলেন এলাকায় ডাকাবুকো বলে জিতেন্দ্র! তার পরেই খোদ মমতা তাঁকে ফোন করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন