Mamata Banerjee

বাংলা ধারাবাহিকে হিন্দি গানে আপত্তি নেই মমতার, বাজারের কথা স্মরণ করালেন ভাষা দিবসে

মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ, পড়াশোনার মাধ্যম যা-ই হোক, খাবার টেবিলে বাবা-মায়ের সঙ্গে যেন বাংলাতেই কথা বলে বাঙালি। তাই বলে অন্যদের মাতৃভাষাকে দূরে ঠেলার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪৭
Share:

বাংলা জেনেও না-বলাটা তাঁর পছন্দ নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

ভাষা নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখার জন্য নয়। ভাষায় যত আদানপ্রদান হবে, ততই তা বাড়বে। তাই বাংলা ধারাবাহিকে হিন্দি গানের ব্যবহার নিয়েও তাঁর আপত্তি নেই। মঙ্গলবার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর অনুরোধ, পড়াশোনার মাধ্যম যা-ই হোক, খাবার টেবিলে বাবা-মায়ের সঙ্গে যেন বাংলাতেই কথা বলে বাঙালি। তাই বলে অন্যদের মাতৃভাষাকে দূরে ঠেলার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সকলের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা করতে হবে।’’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজ্য সরকার একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে। সেখানেও মমতার ভাবনায় লেখা হয়েছে, ‘‘মাতৃভাষাকে ভালবেসে সব ভাষাকেই জানাই সম্মান।’’

Advertisement

বাংলা সিরিয়ালে কেন হিন্দি গান ব্যবহার করা হবে, বছর কয়েক আগে এ নিয়ে সরব হয়েছিল একটি সংগঠন। বিশিষ্টজনেরাও এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মমতা যদিও মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আজ সিরিয়ালগুলো দেখুন না। বাংলায় অনুষ্ঠান, হিন্দি গান গাইছে।’’ কেন এমনটা করা হচ্ছে, সেই ‘যুক্তি’ও দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, বাজারের কথা মাথায় রেখেই এমনটা হচ্ছে। মমতার কথায়, ‘‘কেন গাইছে, কারণ মার্কেটটা তা-ই। মার্কেটে যেতে গেলে, নতুন বিজ়নেসে যেতে গেলে এটা করতে হয়।’’

প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা যায়, মমতা নিজেও বাংলা ধারাবাহিকের নিয়মিত দর্শক। নিজেও সে কথা অনেক বার জানিয়েছেন। ধারাবাহিক কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন। এ বার বাংলা ধারাবাহিকে হিন্দি গানের ব্যবহার নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে মিল রয়েছে টেলিপাড়ার দাবিতেও। ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্তরাও বলেন, দর্শকরা হিন্দি গানের ব্যবহার গ্রহণ করছেন।

Advertisement

তবে মমতা এ-ও জানিয়েছেন, বাংলা জেনেও না-বলাটা তাঁর পছন্দ নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, বাংলা আমার প্রাণের ভাষা। অনেকে বাংলা জেনেও বলেন না। ঠিক নয়।’’ তাঁর মতে, বাকি দুনিয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে হলে ইংরেজি শিখতেই হবে। তা বলে ভোলা যাবে না বাংলা। তাঁর কথায়, ‘‘সকলে ইংরেজিতে পড়াশোনা করেন, ইংরেজিটা শিখুন ভাল করে। আন্তর্জাতিক মানের তাঁদের হতে হবে। কিন্তু আমি যখন বাড়িতে খাবার টেবিলে বসব, বাড়িতে যখন চা খাব, বাড়িতে যখন বাবা-মার সঙ্গে আড্ডা দেব, তখন বাংলাটা বলা উচিত।’’ মমতার আক্ষেপ, ‘‘সেটাই এখন করা হয় না।’’

মমতা আগেও একাধিক বার জানিয়েছেন, বাংলার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় তিনি কথা বলতে পারেন। যখন ভিন্‌রাজ্যে গিয়েছেন, তখন স্থানীয় ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি মণিপুরে ভোটপ্রচারে গিয়েও তিনি জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই সেখানকার ভাষা শিখে নেবেন ইউটিউব থেকে। মাতৃভাষা দিবসেও একই কথা জানালেন তিনি। সকলকে তাঁর মতোই অন্য ভাষা শিক্ষায় জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা যাদের মাতৃভাষা, অন্য ভাষাও শিখুন, আমার কোনও আপত্তি নেই। সবার সব ভাষাকে শ্রদ্ধা করুন। আমরা হিন্দিকে স্বীকৃতি দিয়েছি, উর্দুকে স্বীকৃতি দিয়েছি, কুর্মি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি, নেপালি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি, রাজবংশী, অলচিকি যেটা সাঁওতালি ভাষা, স্বীকৃতি দিয়েছি, গোর্খা ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি।’’

তবে কোনও ভাষা নিয়ে ছুতমার্গ বা কট্টর মনোভাব পছন্দ করেন না, সে কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছে ভাষা সংযোগের মাধ্যম। একে অন্যের ভাষা বুঝলেই যথেষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা বাংলায় অনেক ধরনের মানুষ, অনেক ধর্ম, বর্ণ, জাতিকে নিয়ে বসবাস করি। তার ভাষাটা যদি বুঝি, সেটাই এনাফ (অনেক)। আমার ভাষাটা তিনি যদি বুঝতে পারেন, ফেয়ার এনাফ (যথেষ্ট)।’’ তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘‘এখানে অবাঙালি যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা যা বাংলা বলেন, আমরা তা বলি না।’’ ভাষায় যে সমন্বয়েরও প্রয়োজন, সে কথাও বার বার বলেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, ভারতে যেমন বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে ঐক্য, ভাষার ক্ষেত্রেও তা-ই। আর এই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘শরীরে যেমন হাত আছে, পা আছে, লিভার, কিডনি আছে, চোখ আছে, কান আছে, দেখবেন তেমনই, সব ভাষা নিয়েই আমাদের দেশ। সারা পৃথিবীতে আমাদের ভাইবোনেরা ছড়িয়ে রয়েছে।’’

মঙ্গলবার নিজের লেখা কবিতা পড়েই বক্তব্য শেষ করেন মমতা। তার আগে তিনি বলেন, ‘‘২১ নিয়ে আমার দু-তিনটে কবিতা রয়েছে। একটা সিম্পল (সহজ) বলে দিচ্ছি। নিজের কবিতা বলি না। লেখার পর আর পড়েও দেখি না। ব্যাড হ্যাবিট (অভ্যাস)। অন্যদেরটা মুখস্থ থাকে। বলেছে বলে জোগাড় করে নিলাম একটা। কবিতার নাম একুশে। একুশে মানে অঙ্গীকার, একুশে মানেই ভাষা, একুশে মানেই পথচলা, নব প্রজন্মের দিশা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন