রক্তদানে স্মরণ কৌস্তভকে

২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর মারা যান কৌস্তভ। সে দিন ছিল দুর্গাপুজোর দশমী। কৌস্তভের মৃত্যু সংবাদ যেন বিসর্জনের বিষাদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪২
Share:

নতুনবাজারে শিবির। নিজস্ব চিত্র

জঙ্গলে গিয়ে হাতির হানার মুখে পড়েছিলেন তিনি। অতিরিক্ত রক্তপাতে হাসপাতালে আনার পথেই মৃত্যু হয়েছিল মেদিনীপুরের তরুণ কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দু’বছর আগের সেই ঘটনা শহরবাসী ভোলেননি। সোমবার কৌস্তভের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর পাড়ায় তাই হল রক্তদান শিবির। রক্তপাতে মৃত কৌস্তভকে স্মরণ করা হল রক্তদানেই। পাশের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৌমেন খান বলছিলেন, “কৌস্তভ অন্য রকম ছেলে ছিল। সকলের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলত। মানুষ ওঁকে চিরদিন মনে রাখবে।’’

Advertisement

২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর মারা যান কৌস্তভ। সে দিন ছিল দুর্গাপুজোর দশমী। কৌস্তভের মৃত্যু সংবাদ যেন বিসর্জনের বিষাদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। সামনে থেকে হাতির পাল দেখার বহুদিনের শখ ছিল কৌস্তভের। ঘটনার দিন দুপুরে আট বন্ধু মিলে মোটর বাইকে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায় গিয়েছিলেন কৌস্তভরা। জঙ্গলে হাতির পালের দেখাও মেলে। এরপর হাতির ছবি মোবাইল-বন্দি করতে গিয়ে আচমকা একটি দাঁতাল ঘুরে দাঁড়ায়। সঙ্গীরা ছুট দিলেও কৌস্তভ পালাতে পারেননি। পরে বন্ধুরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, কৌস্তভ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। প্রথমে মানিকপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে আনা হয়। তবে প্রাণ বাঁচানো যায়নি।

সে দিন কৌস্তভের চিকিৎসার তেমন সুযোগই মেলেনি। তবে অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালে এনেও রক্তের অভাবে রোগীকে বাঁচানো যায় না। উৎসবের মরসুমে সে ভাবে শিবির না হওয়ায় রক্তের জোগান থাকে কম। এ বারও ছবিটা এক। মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের চেয়ারম্যান অসীম ধর বলেন, “এই সময়ে অনেকেই উত্সবে মেতে থাকেন। ফলে, রক্তদান শিবির কম হয়। তাই সমস্যা হয়।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও মানছেন, “উত্সবের সময়ে শিবিরের সংখ্যা কমে।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক সূত্রে খবর, এই হাসপাতালে গড়ে যেখানে ৭০ ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয়, সেখানে শিবির থেকে সংগ্রহ হয় গড়ে ৪০ ইউনিট। অর্থাৎ, দিনে গড়ে ৩০ ইউনিট রক্তের ঘাটতি থাকে। এখন ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে রক্তের চাহিদা বেড়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে কৌস্তভ স্মরণে রক্তদান শিবির করে বার্তা দিতে চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। ডাকনাম শুভতেই বেশি পরিচিত ছিলেন কৌস্তভ। সেই শুভর পাড়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনবাজারের এক সভাঘরে এ দিন রক্তদান শিবির হয় ওয়ার্ড কংগ্রেসের উদ্যোগে। সহযোগিতায় ‘কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায় ফ্যান্‌স ক্লাব’। ওয়ার্ড কংগ্রেস সভাপতি পূর্ণচন্দ্র ঘোষ বলছিলেন, “কৌস্তভ নেই, ভাবতেই পারা যায় না। ভীষণ স্নেহ করতাম ওঁকে।’’ শিবিরে এসেছিলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, জেলা কংগ্রেস নেতা কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। সামিল হয়েছিলেন অজিতেশ দাস, গণেশ হাঁসদা, হিমাংশু কর্মকারের মতো এলাকার যুবকেরাও। অজিতেশ বলছিলেন, “কৌস্তভদা সত্যিই অন্য রকম ছিল। ওঁর কথা খুব মনে পড়ছে।’’ ছলছল চোখে গণেশেরও মন্তব্য, “কৌস্তভদাকে খুব মিস করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন