বেলদায়। নিজস্ব চিত্র
লকডাউন হল। তবে সতর্কতা দেখা গেল না মেদিনীপুর শহরে। রাস্তা মোটের ওপরে সুনসান থাকলেও মুদির দোকানে কাছাকাছিই দাঁড়িয়ে থাকলেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বারবার সামাজিক দূরত্ব রাখার কথা বলছেন। কিন্তু সেই কাজ কতটা মানা হচ্ছে সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। পরিস্থিতি দেখে মঙ্গলবারও মেদিনীপুরে অভিযানে বেরিয়েছে পুলিশ- প্রশাসন। একাধিক এলাকায় লাঠি উঁচিয়ে ভিড়ের দিকে তেড়ে গিয়েছে পুলিশ। জমায়েত দেখলে ছত্রভঙ্গ করেছে। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষের কাছে ঘরে থাকার আবেদন করা হচ্ছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘দোকান, বাজারে কোনওভাবেই ভিড় রাখা যাবে না। এই সময়ে ভিড়ে থাকা নিরাপদ নয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে।’’ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই সময়ে সকলেরই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলা উচিত। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে বলেন তিনি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, সর্বত্র পুলিশের চেকিং চলছে। নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পথে নামলে এ বার কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
লকডাউন সফল করতে রেলশহরেও পথে নামতে হয় পুলিশকে। সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত খড়্গপুর শহরে লকডাউন ছিল মূলত খাতায়-কলমে। অসচেতনতার নজির দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ জায়গায়। বিদেশ থেকে ফিরেও অনেকে পাড়ায় ঘুরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মাঠে ঘেঁষাঘেষি করে বসেই চলেছে তাসের আসর। খুলেছে অনেক দোকান। পাড়ার মোড়ে দেখা গিয়েছে জটলা। চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়েছেন অনেকে। দু’একটি অটোও চলেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় লকডাউন চালুর পরেই পথে নামেন শহরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ। তারপরেও সচেতন হয়নি শহরবাসী। মঙ্গলবার সকাল হতেই ফের ভিড় জমে বাজারে। মঙ্গলবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি হাতে পথে নামে পুলিশ। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ মালঞ্চ, ঝাপেটাপুর, কৌশল্যা, পুরাতনবাজার, ইন্দা, গোলবাজার, পাঁচবেড়িয়া, সুভাষপল্লি এলাকায় অভিযান চালায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। মনোহারী দোকান, খাবারের হোটেল বন্ধ করা হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা বারবার মানুষকে আবেদন করেছি সরকারের নির্দেশ মানতে। কিছু মানুষ সেটা না মানায় আমাদের পথে নামতে হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
মঙ্গলবার ঘাটাল শহরে আনাজ, মাংস, গ্যাস, মুদিখানার দোকান খোলা ছিল। গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই চলেছে বাজার করা। বেশিরভাগ জায়গাতেই ক্রেতাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রাখা হয়নি। ইতিউতি ছিল জটলা। তবে কয়েকটি মুদিখানা দোকান ও ব্যাঙ্কের সামনে দড়ি-বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। ব্যাঙ্ক ও এটিএমগুলিতে ভিড় তুলনামূলক ভাবে কম ভিড় ছিল। তবে ভিড় ছিল হাসপাতাল, গ্যাসের দোকানে। অনেকে সাধারণ জ্বর-কাশি নিয়েই হাসপাতালে ভিড় করেছেন। এ দিন ঘাটাল হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও পরিজনদের মাস্ক দেওয়া হয়। ঘাটাল শহরের কুশপাতায় গ্যাস কাউন্টারেও লম্বা লাইন ছিল। তবে এখানে অবশ্য লাইনে একজনের সঙ্গে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব রাখার ব্যবস্থা ছিল। মদের দোকানগুলিতে ঝাঁপ বন্ধ থাকলেও আড়ালে আবডালে মদ বিক্রি হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের পাইকারি আনাজ বাজারে ভাল ভিড় থাকলেও মাছের বাজারে ভিড় ছিল কম। কোথাও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বালাই চোখে পড়েনি। জুবিলি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী বাবলু রাউত বলেন, ‘‘এদিন বাজারে খদ্দের খুব কম এসেছিলেন। বেশির ভাগ খদ্দের মাস্ক পরে এসেছিলেন।’’ ঝাড়গ্রামে এ দিন দুধের গাড়ি আসেনি। শহর মোটের উপরে সুনসান থাকলেও কয়েক জায়গায় জটলা ছিল। মহকুমাশাসক (সদর) তথা পুরপ্রশাসক সুবর্ণ রায় দিনভর লাঠি নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এ দিন গ্যাসের দোকানেও লম্বা লাইন ছিল। পুলিশ এসে জমায়েত সরায়। গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার ম্যানেজার পঞ্চানন পাতর বলেন, ‘‘আমরা বাড়ি-বাড়ি সিলিন্ডার সরবরাহ করছি। কিন্তু একাংশ গ্রাহক তা-ও লাইন দিয়েছিলেন।’’
এ দিন সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরের বলরামডিহি এলাকায় বেআইনি জমায়েতের অভিযোগে এক যুবকের বাইক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।