লিখিত স্বীকারোক্তিতে দ্বন্দ্ব

দুর্নীতি হয়েছে, মানলেন প্রধান

ওই লিখিত স্বীকারোক্তিতে জানানো হয়েছে, কম্পোজিট পিট খনন ও গীতাঞ্জলি গৃহনির্মাণ প্রকল্পে যতগুলি অনুমোদন হয়েছিল তার মধ্যে হয়তো অনেকগুলি প্রকল্প শেষ হয়নি।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

সবং শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৩
Share:

প্রধানের লেখা স্বীকারোক্তি। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি না করেই গীতাঞ্জলি প্রকল্পের প্রাপকদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন প্রধান। মৌখিক নয়। একেবারে লিখিত ভাবে অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন সবংয়ের সার্তা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুমিতা গাঁতাইত।

Advertisement

ওই লিখিত স্বীকারোক্তিতে সই করেছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সুদীপ দাস-সহ চারজন অফিসকর্মী। মূলত ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে গীতাঞ্জলি প্রকল্পের বাড়ি ও একশো দিনের কাজে কম্পোজড পিট তৈরির টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। মঙ্গলবার এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপি নেতা-কর্মীরা গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে সরব হন। তার পরেই ঘটনার কথা মেনে নিয়ে এই লিখিত স্বীকারোক্তি দেন প্রধান ও নির্মাণ সহায়ক-সহ অফিস কর্মীরা।

ওই লিখিত স্বীকারোক্তিতে জানানো হয়েছে, কম্পোজিট পিট খনন ও গীতাঞ্জলি গৃহনির্মাণ প্রকল্পে যতগুলি অনুমোদন হয়েছিল তার মধ্যে হয়তো অনেকগুলি প্রকল্প শেষ হয়নি। অথচ লেবারের মাস্টাররোলে সই, পঞ্চায়েত সদস্যের সই এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে ছবি তোলার ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু ভুলভ্রান্তি থেকে গিয়েছে বলেও স্বীকার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান সুমিতা বলেন, “গত এক বছর ধরে আমাকে পুতুলের মতো বসিয়ে উপপ্রধান শুধু সই করে দুর্নীতি করেছেন। আমি এর প্রতিবাদ করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। উপ প্রধানের নির্দেশেই নির্মাণ সহায়ক গীতাঞ্জলি ও কম্পোজিট পিট খননের টাকায় কারচুপি করেছেন।” যদিও বিষয়টি নিয়ে নির্মাণ সহায়ক সুদীপ দাস বলেন, “বিজেপির লোকেরা জোর করে লিখিত নিয়েছে। আমি এসবে যুক্ত নই। এখন প্রধানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করব না।” উপপ্রধান সুব্রত নায়েকের কথায়, “প্রধান নিজে দুর্নীতিগ্রস্ত। আমরা তাতে প্রশ্রয় না দেওয়া আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। প্রয়োজনে তদন্ত হোক।”

Advertisement

ঘটনায় উচ্ছ্বসিত বিজেপির যুব মোর্চার পশ্চিম মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত বেরা বলেন, “এই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রকৃত প্রাপক গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি পায়নি। কারচুপিতে পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক-সহ সকলে জড়িত রয়েছে। এটা স্বীকার করেই প্রধান ও জড়িত চারজন অফিসকর্মী লিখিত দিয়েছেন।”

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই এই সার্তা গ্রাম পঞ্চায়েতে অস্থির পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার সার্তা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের অধিকাংশ পঞ্চায়েত সদস্য নির্দল হিসাবে জয়ী হয়েছিলেন। পরে তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে প্রধান ও উপপ্রধান তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন। বোর্ড গঠনের পর থেকেই প্রধান ও উপপ্রধানের দ্বন্দ্ব বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। প্রধানের দাবি, তিনি পঞ্চায়েতে প্রথমবার জয়ী হওয়ায় হুমকি দিয়ে উপপ্রধান ভুল কাগজে সই করিয়ে গত এক বছর ধরে দুর্নীতি করেছেন। এমনকি উপপ্রধান ও কয়েকজন পঞ্চায়েত সদস্যের চাপে অফিসের কর্মীরা এই দুর্নীতিতে যুক্ত হয়েছেন। এই মর্মে ৯জুলাই বিডিও-র কাছে উপপ্রধানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান প্রধান। এ বার বিরোধীরা অভিযোগ তোলার পরই গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন তিনি। কারণ ব্যাখ্যায় তিনি উপপ্রধানকে জড়িয়ে দেওয়ায় দ্বন্দ্ব আরও বাড়ল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন