বিপাকে রফতানি

পানের জায়গা কম পড়ছে ট্রেনে

পান-সুপারির আতিথেয়তায় অভ্যস্ত বাঙালি পান চাষেও বেশ খানিকটা এগিয়ে সারা দেশে। এ রাজ্য থেকেই পানের জোগান যায় মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্র কিংবা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। তার বেশিরভাগটাই পাড়ি দেয় ট্রেনে চড়ে। অথচ সেই ট্রেন সফরেই দেখা দিচ্ছে সমস্যা।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৫
Share:

ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেসে তোলা হচ্ছে প্যাকিং করা পান। মেচেদা স্টেশনে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পান-সুপারির আতিথেয়তায় অভ্যস্ত বাঙালি পান চাষেও বেশ খানিকটা এগিয়ে সারা দেশে। এ রাজ্য থেকেই পানের জোগান যায় মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্র কিংবা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। তার বেশিরভাগটাই পাড়ি দেয় ট্রেনে চড়ে। অথচ সেই ট্রেন সফরেই দেখা দিচ্ছে সমস্যা।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের পান ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সম্প্রতি দূরপাল্লার ট্রেনের পার্সেল ভ্যানে পান তোলার জন্য কোটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাতে রফতানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মার খাচ্ছেন জেলার পানচাষি ও ব্যবসায়ীরা। চাহিদা মতো পার্সেল ভ্যানের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন জেলা পান ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব।

পান ব্যবসায়ীদের তরফে জানা গিয়েছে, রেলের নির্দিষ্ট কয়েকটি ট্রেনের পার্সেল ভ্যানে পান বোঝাই করার সুযোগ মেলে মেচেদা ও পাঁশকুড়া স্টেশন থেকে। সেই সব পান মুম্বই, আহমেদাবাদ, নাগপুর, বিলাসপুর, হায়দ্রাবাদ, গুয়াহাটি-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৯০০০ হাজার হেক্টর এলাকায় পানের চাষ হয়। তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় ৩২৭০ হাজার হেক্টর। ব্যবসায়ীদের দাবি, জেলার যে সব এলাকা থেকে পান চাষিরা আসেন, সেখান থেকে মেচেদা স্টেশনেই সহজে যাওয়া যায়। কিন্তু ১১ অগস্ট থেকে যে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে, তাতে মেচেদা স্টেশন থেকে পান তোলার ‘কোটা’ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে পাঁশকুড়া থেকে কিছু পান ট্রেনে তুলতে হচ্ছে। তাতে সময় লাগছে বেশি এবং খরচও বাড়ছে। মেচেদার এক পান ব্যবসায়ী কথায়, ‘‘আগে ভাগে সড়কপথে কিছু পান পাঁশকুড়ায় পাঠিয়ে রাখতে হয়। সড়কপথের খরচটা তো বেশি পড়ে যাচ্ছে।’’ এর ফলে পান বাজারে আসা চাষিদের কাছ থেকে সব পান কিনতে পারছেন না তাঁরা। এতে মার খাচ্ছেন চাষিরাও।

Advertisement

যদিও, দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং) সাত্যকি নাথ বলেন, ‘‘যে পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে তাতে ব্যবসায়ীদের তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া, এক মাসের (১১ অগস্ট থেকে ১১সেপ্টেম্বর) জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত হবে।’’

রাজ্যের অন্যতম অর্থকরী ফসল পান চাষের উপর বহু পরিবার নির্ভরশীল। জেলা উদ্যান পালন দফতর ও রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, হলদিয়া ও কাঁথি মহকুমা ছাড়াও পাশের জেলা হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় উৎপাদিত পানের বেচাকেনা চলে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬ টি পানের বাজারে। মেচেদা, নোনাকুড়ি, বুড়ারী, ডিমারি, চাঠরা, তমলুক, নিমতৌড়ি, খঞ্চি বাজার ও কাঁথি মহকুমার রামনগর পানের বাজারে সরাসরি চাষিরা আসেন। সেখান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে পান ঝুড়ি বোঝাই করে রফতানি করা হয় ভিন রাজ্যে, এমনকী বাংলাদেশেও। কিন্তু নতুন ‘কোটা’-র জন্য জেলার প্রায় ৫০০ পান ব্যবসায়ী অসুবিধায় পড়েছেন বলে অভিযোগ।

পান ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কুড়লা এক্সপ্রেসের দু’টি পার্সেল ভ্যানে ২৩ টন করে মোট ৪৬ টন মাল বহনের সুযোগ রয়েছে। আগে মেচেদা থেকে ১৫টন করে মোট ৩০টন পান তোলা যেত দু’টি পার্সেল ভ্যানে। কিন্তু নতুন নিয়মে মেচেদা স্টেশন থেকে মাত্র ২০ টন পান বোঝাই করা যায়। পাঁশকুড়া থেকে তোলা যায় আরও ১৮ টন। অন্য দিকে শালিমার থেকে পান তোলার কোটা বাড়িয়ে করে দেওয়া হয়েছে ৮টন। কিন্তু বেশির ভাগ চাষিই যেহেতু পূর্ব মেদিনীপুরের তাই মেচেদা থেকে মাল তুললেই তাঁদের সুবিধা। অন্যান্য ট্রেনে আরও কম জায়গা বরাদ্দ।

শুধু এই ‘কোটা’ ব্যবস্থাই নয়। পূর্ব মেদিনীপুরের পান ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস, আহমেদাবাদ ও সম্বলেশ্বরী এক্সপ্রেসের পার্সেল ভ্যান ২০০৮ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে বেসরকারি সংস্থার হাতে লিজ দেওয়ায় ব্যবস্থা করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে এখন সেখানে দেড় গুণেরও বেশি খরচ হচ্ছে পান রফতানি করতে।

পান ব্যবসায়ীদের সংগঠন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিটল ট্রেডারস্ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুকান্ত আদক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘রেল আমাদের কথা ভাবছে না। একে পান তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। তার উপর সেই পান ভাগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে ভিন রাজ্যে গিয়ে।’’ তিনি জানান, আগে কুড়লা এক্সপ্রেস মুম্বই পৌঁছানোর আগেই ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরে একটি পার্সেল ভ্যান দেওয়া হত। সেখান থেকে পান নামিয়ে ছত্তীসগঢ়ের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যেত সহজে। কিন্তু গত ১০ মে রেল একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। তাতে এখন কুড়লা এক্সপ্রেসের পান বোঝাই দু’টি পার্সেল ভ্যানই সোজা মুম্বই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে বিলাসপুরে পান নিয়ে আসতে হায়রান হতে হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন