নালিশ মেদিনীপুর মেডিক্যালের বিরুদ্ধে

জোর করে ছুটি জখমদের

শুধু সঞ্জয় নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলে ছাউনি ভেঙে জখম দাসপুরের রানিচকের নির্মল মণ্ডল, দাঁতনের সূর্যকান্ত চন্দদেরও এক অনুযোগ, ‘‘এখনও সেরে উঠিনি। তাও তড়িঘড়ি ছুটি দিতে চাইছে হাসপাতাল।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০১:২৫
Share:

মেডিক্যাল চত্বরে ক্যাম্প বিজেপির। নিজস্ব চিত্র

লোহার খুঁটি ভেঙে মাথা ফেটেছে। চিকিৎসা চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালের মেঝেতে বসেছিলেন শালবনির নারায়ণপুরের সঞ্জয় মাহাতো। সঞ্জয় বললেন, “এখনও ঠিক মতো সেরে উঠিনি। মাঝেমধ্যেই মাথা ব্যথাও হচ্ছে। তাও হাসপাতাল ছুটি দিতে চাইছে।” তাঁর কথায়, “আর ক’টা দিন হাসপাতালে থাকলে ভাল হত। এখানে চিকিৎসাটা হত। কেন এত তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিতে চাইছে বুঝতে পারছি না।”

Advertisement

শুধু সঞ্জয় নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলে ছাউনি ভেঙে জখম দাসপুরের রানিচকের নির্মল মণ্ডল, দাঁতনের সূর্যকান্ত চন্দদেরও এক অনুযোগ, ‘‘এখনও সেরে উঠিনি। তাও তড়িঘড়ি ছুটি দিতে চাইছে হাসপাতাল।’’

বস্তুত, জখমদের অনেককেই এ দিন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুর্ঘটনার পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল জখম ৯০ জনকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ১৪ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সোমবার রাত পর্যন্ত ভর্তি ছিলেন ৭৬ জন। তার মধ্যে দু’জনকে মঙ্গলবার কলকাতার এক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আর মেদিনীপুর মেডিক্যালে এ দিন ভর্তি রয়েছেন ২৮জন।

Advertisement

জোর করে জখমদের ছুটি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি-ও। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলছেন তাঁর সরকার আহতের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা শেষের আগেই কয়েকজনকে জোর করে ছুটি দিয়ে দিতে চাইছেন। এটা কাম্য নয়।” বিজেপির রাজ্য নেতা পেশায় চিকিৎসক সুভাষ সরকারের আবার অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শুধু প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তব হল, মেদিনীপুর মেডিক্যালের মতো বড় হাসপাতালেও ন্যূনতম চিকিৎসা পরিকাঠামো নেই।’’

কিছু বলতে চাননি হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা। তবে জোর করে ছুটি দেওয়ার অভিযোগ মানছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক আধিকারিক বলেন, “জোর করে কাউকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। এটা হয়ও না। যাঁদের শারীরিক অবস্থার অনেকখানি উন্নতি হয়েছে, তাঁদেরই ছুটি দেওয়া হচ্ছে।” বেশ কয়েকজন জখম নিজেরাই বেসরকারি নার্সিংহোমে গিয়ে ভর্তি হয়েছেন।

সোমবার সভাস্থলে দুর্ঘটনার পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসে আহতদের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে দফায় দফায় হাসপাতালে গিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গিয়েছেন দিলীপ ঘোষ, বাবুল সুপ্রিয়রা। জখমদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে হাসপাতালে এসেছেন সিপিএমের জেলা নেতৃত্বও। ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, তাপস সিংহরা। হাসপাতালে দেখা গিয়েছে তৃণমূল কর্মীদেরও। বিজেপি সূত্রে খবর, জখমদের দেখভাল দলের তরফ থেকেই করা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে বিজেপি-র তরফে ক্যাম্প করা হয়েছে। আহতদের পরিজনেদের মেদিনীপুরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে গিয়ে জখমদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কারও কোনও অসুবিধে যাতে না হয় তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। দলের তরফে তা দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন