লড়াই থামল বাম নেতার

স্বজন হারিয়ে শোক-বিহ্বল খয়েরুল্লা চক

এই সে দিনও পাড়ার মোড়ে চা দোকানে বসে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন তিনি। সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপি ভেদাভেদ না করে সহজ ভাবে মিশেছেন মানুষের সঙ্গে। সেই গৌতম মিত্রই আর নেই। স্বজন-হারানোর শোকে তাই স্তব্ধ মেদিনীপুর সদর ব্লকের খয়েরুল্লা চক।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০০:৪০
Share:

সুনসান: রাস্তায় লোকজন নেই। ঝাঁপ খোলেনি দোকানপাটেরও। বৃহস্পতিবার খয়েরুল্লা চকে। নিজস্ব চিত্র

এই সে দিনও পাড়ার মোড়ে চা দোকানে বসে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন তিনি। সিপিএম-তৃণমূল-বিজেপি ভেদাভেদ না করে সহজ ভাবে মিশেছেন মানুষের সঙ্গে। সেই গৌতম মিত্রই আর নেই। স্বজন-হারানোর শোকে তাই স্তব্ধ মেদিনীপুর সদর ব্লকের খয়েরুল্লা চক। বৃহস্পতিবার দিনভর এলাকা ছিল থমথমে। স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলছিলেন, “গৌতম খুব কাছের মানুষ ছিলেন। ওকে এ ভাবে হারাতে হবে ভাবিনি।”

Advertisement

বাম আমলে ছাত্র রাজনীতি করেছেন। সেখান থেকেই যুব সংগঠনে আসা। সুবক্তা, মিশুকে হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন গৌতমবাবু। সিপিএমের যুব সংগঠনে গুরুদায়িত্বও পেয়েছিলেন। অবিভক্ত মেদিনীপুরে ডিওয়াইএফের জেলা সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ দিন। মেদিনীপুর ভেঙে যখন পূর্ব-পশ্চিম দু’টি জেলা হয়, তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের যুব সভাপতি পদ পান গৌতমবাবু। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরে গৌতমবাবুর রাজনৈতিক সক্রিয়তা কমে গিয়েছিল। তবে দলের সঙ্গে ছিল তাঁর নাড়ির যোগ। জেলার মিটিং-মিছিলে সে ভাবে দেখা না গেলেও এলাকার দলীয় কর্মসূচিতে থাকতেন গৌতমবাবু। মানুষ বিপদে পড়েছেন শুনলে ছুটে যেতেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। সেচ দফতরে কাজ করার সূত্রে কো- অর্ডিনেশন কমিটির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

তৃণমূলের ছেলেদের হাতে গৌতমবাবু মার খেয়েছেন— মঙ্গলবার সকালে এই অভিযোগ ওঠার পর থেকেই খয়েরুল্লা চকে শোরগোল পড়েছিল। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় গুরুতর আঘাত লাগে। মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে তাঁকে মেদিনীপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কলকাতার এসএসকেএমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। বুধবার অস্ত্রোপচারের পরে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। বুধবার রাতে এসএসকেএমেই গৌতমবাবুর লড়াই থেমে যায়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁর মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছয় খয়েরুল্লা চকে। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে রেখে গিয়েছেন গৌতমবাবু। ছেলে ও মেয়ে দু’জনেই পড়াশোনা করছে। পরিবারের পাশাপাশি গৌতমবাবুর মৃত্যুতে এলাকাবাসীরও মন ভার। কেউ কেউ প্রকাশ্যে চোখের জলও মুছেছেন। এ দিন এলাকার দোকানপাটও ছিল বন্ধ। দুপুরে এসএসকেএমের মর্গে ময়নাতদন্তের পরে সন্ধ্যায় মরদেহ এসে পৌঁছয় মেদিনীপুরে। দলের অন্দরে গৌতমবাবু যে কতটা জনপ্রিয় ছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে সিপিএমের ছাত্র-যুব কর্মীদের ফেসবুক পোস্টেও। কেউ লিখেছেন, ‘মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মানলেন গৌতম মিত্র। তৃণমূলী গুন্ডারা পিটিয়ে মেরে ফেলল তাঁকে।’ কেউ লিখেছেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ হোক। যতক্ষণ খুনিদের চূড়ান্ত শাস্তি না হয়, ততক্ষণ আমরা থামব না।’

সিপিএমের প্রাক্তন যুব নেতা তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিংহের সঙ্গে গৌতমবাবুর বন্ধুর সম্পর্ক ছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে প্রার্থী হয়েছিলেন তাপসবাবু। সেই সময়ে রামনগরে প্রচারে গিয়েছিলেন গৌতমবাবু। তাপসবাবুও শোকস্তব্ধ। তিনি বলছিলেন, “গৌতম অনেক লড়াই করেছে। দলকে খুব ভালবাসত। আমরা এক বন্ধুকে হারালাম।” গৌতমবাবুকে মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে যার নাম সামনে এসেছে, সেই তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ কর্মকারকেও বলতে শোনা যায়, “ওর মৃত্যুর খবরে আমিও শোকাহত। কিছু ভাল লাগছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন