Durga Puja

বাজেটের সঙ্গে কমছে দুর্গা প্রতিমার উচ্চতাও  

মহালয়ার পরে একমাস। তবে পুজো প্রস্তুতিতে ভাটাই। শুনল আনন্দবাজার সামনেই বিশ্বকর্মা পুজো। অথচ মৃৎশিল্পীদের অনেকেই এখনও দুর্গা প্রতিমার পর্যাপ্ত বায়না পাননি। বিশ্বকর্মার বায়নাও কম পেয়েছেন। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৪৬
Share:

প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে ধীর গতিতে। প্রদ্যোৎনগরে। নিজস্ব চিত্র

করোনাভাইরাস ও আমফানের জোড়া ধাক্কায় পুজোর মরসুমের মুখেও সেভাবে ব্যস্ততা নেই পটুয়া পাড়ায়। দুর্গাপুজোর বাকি আর মাস খানেক। এখনও অনেক দুর্গা কাঠামোয় মাটির প্রলেপও পড়েনি।

Advertisement

সামনেই বিশ্বকর্মা পুজো। অথচ মৃৎশিল্পীদের অনেকেই এখনও দুর্গা প্রতিমার পর্যাপ্ত বায়না পাননি। বিশ্বকর্মার বায়নাও কম পেয়েছেন। অথচ, অনান্য বছর এই সময়ে একেবারে গমগম করত মেদিনীপুরের কুমোরপাড়াগুলি। মৃৎশিল্পী বিমানবিকাশ নায়েক বলছিলেন, ‘‘এ বার কাজের বায়না অনেক পরে পরে এসেছে। তাই কাজও শুরু করতে দেরি হয়েছে।’’ এক প্রবীণ মৃৎশিল্পীর আক্ষেপ, ‘‘এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আমি কোনও দিন দেখিনি।’’

অন্যান্য বছর রথের দিন কোথাও কাঠামো পুজো, কোথাও খুঁটি পুজো হয়। প্রতিমা কিংবা মণ্ডপশিল্পীকে বায়না দেওয়া হয়। মেদিনীপুরের মতো জেলার সদর শহরেও গত কয়েক বছর ধরে এমনটা হয়ে এসেছে। করোনাকালে, এ বার অবশ্য ছবিটা অন্য রকম। মৃৎশিল্পী সঞ্জীত গুপ্ত বলছিলেন, ‘‘অন্য বছর রথের আগেই বেশিরভাগ বায়না চলে আসে। এ বার প্রায় সব বায়নাই রথের পরে পরে এসেছে।’’ ফলে, এ বার রথের সময়েও হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে গোটা কুমোরপাড়া।

Advertisement

মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বার প্রায় সব পুজো কমিটিই দুর্গাপ্রতিমার উচ্চতা কমাচ্ছে। অন্য বছর যাদের ১২-১৫ ফুটের প্রতিমা হতো, এ বার তাদের ৬-৮ ফুটের প্রতিমা হচ্ছে। প্রতিমা খাতে বেশি খরচ করতে চাইছে না পুজো কমিটিগুলি। কেউ ১৬-১৮ হাজার, কেউ ২০-২২ হাজার টাকা খরচ করছে।

এ বার বিশ্বকর্মা মূর্তির উচ্চতাও কম। এক মৃৎশিল্পীর কথায়, ‘‘হয়তো অনেকে পুজোর আগের দিন মূর্তি কিনতে আসবেন। তাই কিছু বিশ্বকর্মা মূর্তি বানিয়ে রেখেছি।’’

মৃৎশিল্পী বিমানবিকাশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘নোটবন্দি এবং জিএসটি পর্বের থেকে এ বারের পরিস্থিতি আরও কঠিন। কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ১৮- ২০ হাজার টাকায় প্রতিমা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’’ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিল্পীদের হাতে টাকাও কম রয়েছে। এ দিকে বায়না করতে এসে অনেকে মাত্র চার- পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম দিচ্ছেন। এক মৃৎশিল্পীর কথায়, ‘‘আমরা প্রতিমার দামের ২৫- ৩০ শতাংশ অগ্রিম চাইছি। সব পুজো কমিটি তা দিতে চাইছে না। বলছে, এখনও চাঁদা তোলাই শুরু হয়নি।’’

প্রতি বছর রথের দিনেই কাঠামো পুজো করতেন মৃৎশিল্পী আশিস দে। বায়না না আসায় এ বার রথের দিনে কাঠামো পুজো করতে পারেননি তিনি। ওই পুজো করেছেন জন্মাষ্টমীর দিনে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এ বার রথের সময় পর্যন্ত একটাও বায়না আসেনি। পরে পরে প্রতিমার বায়না পেয়েছি।’’ তিনিও জানান, এ বার পুজো কমিটিগুলি আগের মতো আর বড় প্রতিমা নিতে চাইছে না। কিছু পুজো কমিটি আবার একচালার মূর্তির বায়না দিয়েছে। খুব বেশি হলে সেই মূর্তি ফুট পাঁচেক উঁচু হবে।

মৃৎশিল্পীদের কেউ কেউ এখনও বায়না আসার আশায় রয়েছেন। এক মৃৎশিল্পী বলছিলেন, ‘‘এই অসময়ে আর কিছু কাজের বায়না এলে ভাল হয়। অন্য বছর যে সব পুজো কমিটির প্রতিমা করেছি, তাদের সকলে এখনও যোগাযোগ করেনি। হয়তো ছোট করে পুজো করবে। তাই এখনও আসেনি।’’

করোনার কোপে কপাল পুড়েছে ঝাড়গ্রাম শহরের মৃৎশিল্পীদেরও। ঝাড়গ্রাম শহরের মৃৎশিল্পী শিবশঙ্কর সিংহও বলেন, ‘‘উদ্যোক্তারা এবার কম উচ্চতার কম দামের প্রতিমা চাইছেন। সেই মতো ৫ ও ৮ ফুটের প্রতিমা তৈরি করছি।’’ তিনি জানান, যাঁরা গতবার ৮০ হাজার টাকার প্রতিমা নিয়েছেন, তাঁরা এবার ১৫-২০ হাজার টাকার মধ্যে প্রতিমা চাইছেন।

ঝাড়গ্রাম শহরের আর একটি কুমোরটোলার শিল্পী সঞ্জীব দাস জানালেন, গত বছর ১৪টি বড় দুর্গা প্রতিমা বিক্রি হয়েছিল। এবার উদ্যোক্তারা ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট উচ্চতার মধ্যে প্রতিমা চাইছেন। তাতে লাভ তো দূরের কথা প্রতিমা তৈরির খরচও উঠবে কি-না সন্দেহ। (তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন