এক বছরের মধ্যে পরপর খড়্গপুর আইআইটি-র চারজন ছাত্রের রহস্য মৃত্যু। তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী হচ্ছেন পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের অবসাদ কাটাতে আইআইটি-তে রয়েছে কাউন্সেলিং সেন্টার। এই সেন্টার থাকার পরেও কেনও অবসাদে পড়ুয়াদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বাড়ছে, শুক্রবার আয়োজিত এক আলোচনাসভায় সেই প্রশ্নই তুললেন আইআইটি-র পড়ুয়ারা।
আইআইটি পড়ুয়াদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দিন সন্ধ্যায় এক আলোচনাসভার আয়োজন হয়। সভায় আইআইটি-র অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন পড়ুয়ারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষকেরাও।
গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পরপর প্রতিষ্ঠানের ৩ জন বিটেক পড়ুয়ার অপমৃত্যু হয়। অভিযোগ, গত ১৬ জানুয়ারি জকপুর স্টেশনের কাছে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র লোকেশ মিনা।
গত ৩০ মার্চ রাতে খড়্গপুর শহরের পুরীগেটে রেললাইন থেকে উদ্ধার হয় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সানা শ্রীরাজের দেহ। আইআইটি-র নেহরু হল থেকে গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় নিধিন এন নামে এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। নিধিন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডুয়াল ডিগ্রির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
গত ২১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হল থেকে পড়ে মৃত্যু হয় নিখিল ভাটিয়ার। মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডুয়াল ডিগ্রি কোর্সের ছাত্র নিখিল বিদ্যাসাগর হলের আবাসিক ছিলেন। প্রতিটি ঘটনার পর থেকেই পুলিশ অনুমান করে, অবসাদ থেকেই তাঁরা আত্মঘাতী হয়েছে।
সমস্যা বুঝে গত জুলাই মাসে পড়ুয়াদের চাপ কমাতে আবেশন কর্মসূচি (ইন্ডাকশন প্রোগ্রাম) গ্রহণ করে আইআইটি। অধিকর্তা জানিয়েছিলেন, এই কর্মসূচিতে প্রতিষ্ঠানের কাউন্সেলিং সেন্টারকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাউন্সেলিং সেন্টারে নিখিল যেত। তারপরেও নিখিলের অপমৃত্যুর ঘটনায় একাংশ পড়ুয়ার ওই সেন্টারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলের তিনতলার বারান্দা থেকে পড়ে যাওয়ার পরে নিখিলকে প্রথমে আইআইটি-র নিজস্ব বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও ওই হাসপাতাল থেকে তাঁকে অন্যত্র রেফার করা হয়। এ দিনের সভায় পড়ুয়ারা নিখিল রেফার করার কারণও জানতে চান।
আইআইটির ছাত্র সংগঠন জিমখানা-র জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা প্রত্যুষ বিবেক বলেন, “আমাদের এক ছাত্রের আত্মহত্যার পরে মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। হাসপাতাল, কাউন্সেলিং সেন্টার নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। সেগুলির উত্তর পেতে অধিকর্তার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম।”
যদিও এ বিষয়ে জানতে আইআইটি-র রেজিস্ট্রার প্রদীপ পাইনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান।