Suvendu Adhikari

তখন কেন চুপ ছিলেন শুভেন্দু! ক্ষুব্ধ নিহত নান্টুর বাবা

নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধান অবশ্য সোমবার ওই নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি আঙুল তুলছেন রাজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দিকে।

Advertisement

গোপাল পাত্র

ভগবানপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৪
Share:

—ফাইল চিত্র

এক দিন আগেই পুরুলিয়ার কাশীপুরের সভায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে মুখে খুলেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। নাম না করে কাঠগড়ায় তুলেছেন মহম্মদপুরের নিহত তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানকে।

Advertisement

নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধান অবশ্য সোমবার ওই নিয়োগ দুর্নীতিতে সরাসরি আঙুল তুলছেন রাজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী (যিনি পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা নন, তবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা)-র দিকে। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ছেলের মৃত্যুর জন্যও দায়ী তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব।

রবিবার পুরুলিয়ায় শুভেন্দু অভিযোগ করেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরের জনৈক ‘পতি’ ও পূর্ব মেদিনীপুরের মহম্মদপুরের জনৈক ‘প্রধান’ ছিলেন ‘চাকরির কন্ট্রাক্টর’। তাঁর কথায়, ‘‘দু’জন কন্ট্রাক্ট নিয়ে কলকাতায় বস্তা পৌঁছে দিয়েছে। আর কলকাতা থেকে তোলাবাজ ভাইপোর কোম্পানি এখানে নিয়োগ করে পাঠিয়েছে।’’ শুভেন্দু আরও উল্লেখ করেছেন, জনরোষে ওই ‘প্রধান’কে পিটিয়ে মারার কথাও। রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দু যে মহম্মদপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নান্টু প্রধানকেই ইঙ্গিত করেছেন তা নিশ্চিত। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল নেতা নান্টুই জনরোষে খুন হয়েছিলেন।

Advertisement

পাতকুয়োর মিস্ত্রি থেকে মহম্মদপুর-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নান্টুর উত্থান হয়েছিল উল্কা গতিতে। এক সময় ভগবানপুরে একাধিপত্য ছিল এই তৃণমূল নেতার। চাষজমি দখল করে বেআইনিভাবে ভেড়ি তৈরি থেকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মতো হাজারও অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ধীরে ধীরে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্বেরও কাছাকাছি পৌঁছন নান্টু। অভিযোগ, সেই সময় রাজ্যের এক মন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর সখ্য ছিল।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ায় যথেষ্ট ‘সুনাম’ ছিল ‘আশালতা’ বিএড কলেজের মালিক নান্টুর। তাঁর বাবা তথা মহম্মদপুর-১ অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি চাঁদহরিও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘নান্টু আগে জেলার নেতাদের ধরে বেকার শিক্ষিত যুবকদের চাকরি করে দিত। পরে রাজ্যের এক মন্ত্রীর সঙ্গে ওর যোগাযোগ বাড়ে। মন্ত্রীর হাত ধরে অনেক বেকার ছেলেমেয়ের চাকরি করে দিয়েছে। সেই সময় তো শুভেন্দু অধিকারীও তৃণমূলে ছিলেন। তখন তিনি কিছু বলেননি কেন। এখন বিজেপিতে গিয়ে ছেলের নামে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন।’’ পাশাপাশি, চাঁদহরির কৈফিয়ত, ‘‘অনেকে ছেলেকে টাকা দিয়ে চাকরি পায়নি। ছেলের মৃত্যুর এই রকম প্রায় ৪০০ জনকে মোট ১৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি।’’

নাট্টু-হত্যার রাতে রাজ্যের তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু দেড়েদিঘিতে তাঁর দেহে মালা দিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন। ঘটনায় বিজেপি জড়িত বলেও সরব হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এখন সেই বিজেপি-রই নেতা শুভেন্দু। এ প্রসঙ্গে চাঁদহরির কটাক্ষ, ‘‘নান্টুকে কারা ভাড়াটে লোক দিয়ে খুন করিয়েছিলেন, দলের রাজ্য নেতৃত্ব সবই জানেন। আসল দোষীদের আড়াল করে কিছু লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা সবাই এখন জামিনে মুক্ত। সে দিন শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন সিআইডি তদন্ত হবে। এখনও ছেলের খুনিদের বিচার হয়নি। আর উনি আমার মৃত ছেলের নামে উল্টোপাল্টা কথা বলছেন। আমি এখনও সিআইডি তদন্তই চাইছি।’’

চাঁদহরির অভিযোগ প্রসঙ্গে ভগবানপুর-১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি অভিজিৎ দাস বলেন, ‘‘চাঁদহরিবাবুর ব্যক্তিগত মন্তব্য নিয়ে কিছু মন্তব্য করব না। তবে আমরাও চাইছি নান্টু খুনে প্রকৃত অভিযুক্তদের শাস্তি হোক। কোন নিরাপরাধ ব্যক্তির যেন শাস্তি না পায়। গোটা ঘটনা পুলিশ তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে।’’

আর এ ব্যাপারে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়কের বক্তব্য, ‘‘চাঁদহরিবাবুর উচিত খুনে জড়িত তৃণমূল নেতাদের নাম বলে পুলিশকে সাহায্য করা। পুলিশ তো শাসকদলের নিয়ন্ত্রণে। এতো দেরিতে কেন সিআইডি চাওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন