সাফল্যের-হাসি: স্কুলে সহপাঠীদের কাঁধে সৌগত।
মাধ্যমিকে পাশের হারে গত কয়েক বছর ধরেই রাজ্যে সেরার শিরোপা পূর্ব মেদিনীপুরের মাথায়। এবারও বজায় থাকল সেই ধারাবাহিকতা। সঙ্গে উপরি পাওনা মেধা তালিকাতেও সেরার মুকুট এই জেলার। ভগবানপুরের মহম্মদপুর দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের ছাত্র সৌগত দাস এ বার রাজ্যে প্রথম হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে জেলার আরও দুই পড়ুয়া। স্বাভাবিক ভাবেই এবার বাড়তি উচ্ছ্বাস জেলাবাসীর।
গত সাত বছর ধরেই পাশের হারে রাজ্যে প্রথম স্থান দখল করে আসছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পড়ুয়ারা। কিন্তু মেধা তালিকার শীর্ষস্থান না পাওয়ায় একটা আফসোস ছিল জেলাবাসীর। কারণ এর আগে মাধ্যমিকে পাশের হারে রাজ্য সেরার তকমা না পেলেও ২০০০ সালে হলদিয়ার চকদ্বীপা হাইস্কুলের ছাত্র রাজিবুল ইসলাম রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থান পেয়েছিল। তার পরে ২০০৯ সালে তমলুকের রাজকুমারী সান্ত্বনাময়ী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রেরণা জানা মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় প্রথমের শিরোপা পেয়েছিলেন। তারপর ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছর ধরে পাশের হারে সেরার স্থান দখল করে আসছে জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে মেধা তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে স্থান পেলেও শীর্ষস্থান দখল করতে পারেনি। দশ বছর পর সেই শুন্যতা পূরণ করল সৌগত। আর এমন জোড়া সাফল্যে খুশি জেলার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে সাধারণ মানুষ।
সৌগতের এই সাফল্যের জন্য জেলাবাসীর অভিনন্দনের আঁচ পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সৌগতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৮৬. ০৭ শতাংশ। আর পূর্ব মেদিনীপুরে পাশের হার ৯৫. ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ রাজ্যের গড় পাশের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। পাশের হারে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে কলকাতার ছাত্র-ছাত্রীরা। সেখানে পাশের হার ৯৯. ১৩ শতাংশ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতর সূত্রের খবর, এবার জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল ৬১ হাজার ৯১৮ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ২৮ হাজার ৯৬৭ জন। ছাত্রী ৩২ হাজার ৯৫১ জন। ছাত্রদের পাশের হার ৯৭. ৫৯ শতাংশ। ছাত্রীদের পাশের হার ৯৪. ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাশের হার কিছুটা কমেছে। ২০১৭ সালে জেলায় মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৯৬.০৬ শতাংশ। গত বছর জেলায় মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৯৬. ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ এবছর রাজ্যে সেরা হলেও জেলার পাশের হার কিছুটা হলেও কমেছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের পাশের হার ও মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া নিয়ে জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক আমিনুল আহসান বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে আমাদের জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা এবারও প্রথমস্থান পাওয়ায় আমরা খুশি। মেধা তালিকায় প্রথম স্থানাধিকারীও আমাদের জেলার। এমন সাফল্য জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় উৎসাহ জোগাবে।’’
তমলুক রাজকুমারী সান্ত্বনাময়ী উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, ‘‘অন্য বছরের মতো এবারও আমাদের জেলার পড়ুয়ারা সাফল্য দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে মেধা তালিকায় সৌগত প্রথম স্থান লাভ করায় খুব খুশি হয়েছি।’’
পর পর সেরার শিরোপা পাওয়ার কারণ হিসাবে জেলার শিক্ষাবিদদের অনেকে মনে করেন, অবিভক্ত মেদিনীপুরেই প্রথম সাক্ষরতা অভিযান শুরু হয়েছিল। তার জেরে সার্বিকভাবে জেলায় শিক্ষার পরিবেশ ও অভিভাবকদের সচেতনতা তৈরি হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক আর অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েকে ন্যূনতম স্কুলশিক্ষা দেওয়ার নাছোড় মানসিকতাই মাধ্যমিকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।”