আকাশের মুখ ভার, উদ্বেগে আলু চাষিরা

রোদের দেখা নেই। টানা কয়েকদিন দফায় দফায় হাল্কা বৃষ্টির জেরে স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় মাথায় হাত চাষিদের। দু’-এক দিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাববিক না হলে আলুতে ধসা রোগের প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৯
Share:

গোপগড়ে তোলা সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

রোদের দেখা নেই। টানা কয়েকদিন দফায় দফায় হাল্কা বৃষ্টির জেরে স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় মাথায় হাত চাষিদের। দু’-এক দিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাববিক না হলে আলুতে ধসা রোগের প্রভাব পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেরা-১ ব্লকে অনেক খেতে আলু গাছের পাতা মুড়ে যাওয়ার রোগ দেখা দিয়েছে। রোদ না উঠলে আলু চাষে ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা। কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (তথ্য) দুলালদাস অধিকারী বলেন, “এখনও পর্যন্ত সব ঠিকই রয়েছে। তবে এই আবহাওয়া আলু চাষের পক্ষে মোটেই অনুকূল নয়। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ক্ষতির একটা আশঙ্কা তো রয়েছেই।”

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, চলতি বছর পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বার আলু চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে। তবে সেচের অভাবে আলুর মরসুমে জেলায় আলুর চাষ তেমন ভাবে হয়নি। এমনকী জলের অভাবে এ বার চাষিরা সেভাবে জলদি জাতের আলু চাষও করেনি। ফলে এ বারই প্রথম জেলায় জলদি জাতের আলু চাষ হয়নি। গত বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় অক্টোবর মাসেও আমন ধানের চারা পুঁতে ছিলেন চাষিরা। ধান চাষে পর্যাপ্ত জলের যোগান থাকা প্রয়োজন। ফলে এলাকার জলাশয়, ডোবা, অগভীর নলকূপ থেকে জল তুলে ধান চাষে সেচ দিয়েছিলেন চাষিরা। তারপরেও অনেক জায়গায় খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে পুজোর পরে হাল্কা বৃষ্টি হওয়ায় সেচের সমস্যা অনেকটা মেটে। ফলে অক্টোবর মাসের শেষ দিক থেকে জেলায় ধীরে ধীরে আলু চাষ শুরু হয়। ডিসেম্বর মাসের গোড়াতেও জেলার অনেক ব্লকে আলু চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্টোবর মাসের শেষ দিকে যে সব চাষিরা আলু চাষ করেছিলেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই ফলন পেয়ে গিয়েছেন। তবে যে সব চাষিরা অপেক্ষাকৃত পরের দিকে আলুর চাষ করেছেন, বৃষ্টির দরুণ সেইসব খেতে জল জমলে গাছের ক্ষতি হবে। তাছাড়া আলু চাষের জন্য সেচের প্রয়োজন। তবে মেঘলা আবহাওয়া জমিতে সেচ দেওয়া যাবে না। দুলালবাবু পরামর্শ, “এখন চাষিদের জমিতে কোনও প্রতিষেদক স্প্রে না করতে বলা হয়েছে। জমি থেকে যাতে জল বেরিয়ে যেতে পারে, সেজন্য জমিতে নিকাশির ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।” ইতিমধ্যেই জেলায় প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর ফলন হয়ে গিয়েছে। কিছু এলাকায় আলু তোলা শুরুও হয়েছে। সাধারণত তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে আলু চাষে কোনও সমস্যা হয় না। তবে তাপমাত্রা তার থেকে বাড়লে ও স্যাঁতসেতে আবহাওয়া আলু চাষের পক্ষে প্রতিকূল। আলু চাষের জন্য রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়াই আদর্শ। গত কয়েকদিন আকাশের মুখ ভার থাকায় চাষির কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

Advertisement

স্যাঁতসেতে পরিবেশে গাছের বৃদ্ধি সঠিক হারে হয় না। ফলে ফলনও কমার আশঙ্কা রয়েছে। উপযুক্ত আবহাওয়া না পেলে গাছের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে। ফলে আলু গাছে বিভিন্ন রোগ পোকার প্রকোপ বাড়লে উত্‌পাদনও কমবে। গড়বেতার ধাদিকার আলু চাষি অমল মিশ্র, চন্দ্রকোনা রোডের আলু চাষি গোপাল ঘোষেরা বলেন, “আমরা এ বার দশ বিঘার বেশি জমিতে আলু চাষ করেছি। এই ক’দিনে কিছু খেতে গাছের পাতা ক্রমশ গুটিয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার আবহাওয়া ও রোদ আলু চাষের জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই আবহওয়ার পরিবর্তন না হলে সমস্যায় পড়তে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন