তীব্র দহনে পুড়ছে শহর, ক্ষতি চাষেও

রাস্তায় বেরিয়ে অতি পরিচিতজনকেও চেনা মুশকিল। গরমের থেকে বাঁচতে সকলেই যে চোখ-মুখ ঢেকে পথে বেরিয়েছেন। উপায়ও নেই, চড়া রোদ আর হাওয়ার হলকায় চারপাশ যে পুড়ছে। কিছুক্ষণ রোদে ঘুরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে তাপমাত্রা এতটা চড়েনি এমন নয়। তবে মাঝে মধ্যে কালবৈশাখী দেখা দেওয়ায় অস্বস্তি কমত। এ বার তারও দেখা নেই। মে মাসের শুরু থেকেই চুড়ান্ত দাবদাহ শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০০:০৬
Share:

স্বস্তির খোঁজে। মেদিনীপুরের কালেক্টরেট মোড়ে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

রাস্তায় বেরিয়ে অতি পরিচিতজনকেও চেনা মুশকিল। গরমের থেকে বাঁচতে সকলেই যে চোখ-মুখ ঢেকে পথে বেরিয়েছেন। উপায়ও নেই, চড়া রোদ আর হাওয়ার হলকায় চারপাশ যে পুড়ছে। কিছুক্ষণ রোদে ঘুরলে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে তাপমাত্রা এতটা চড়েনি এমন নয়। তবে মাঝে মধ্যে কালবৈশাখী দেখা দেওয়ায় অস্বস্তি কমত। এ বার তারও দেখা নেই।

Advertisement

মে মাসের শুরু থেকেই চুড়ান্ত দাবদাহ শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। ১ মে-তেই জেলায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর ক’দিন ৩৭-৩৮ ডিগ্রির আশপাশে তাপমাত্রা ওঠানামা করে। ৯ মে তাপমাত্রা পৌঁছয় ৪১ ডিগ্রিতে। ১০ মে সামান্য বৃষ্টিতে কিছুটা শান্তি হয়েছিল। ১২ মে থেকে আর বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তাপমাত্রাও ৪০ ডিগ্রির নীচে নামেনি। দিন দিন পারদ চড়েছে। গত শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৪১.৪ ডিগ্রি, রবিবার বেড়ে হয় ৪১.৬ ডিগ্রি, সোমবার ৪২.৬ ডিগ্রি এবং মঙ্গলবারও তাপমাত্রা ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সঙ্গে বইছে গরম বাতাস। রোদের হলকায় চোখ-মুখ পুড়িয়ে দিচ্ছে। দরজা-জানলা বন্ধ না করে ঘরের ভেতরেও বসা যাচ্ছে না। রাত দশটাতেও তীব্র গরম।

এই গরমেই সরকারি কর্মচারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অফিস যেতে হচ্ছে। অনেক তো কাজের জন্য ঘুরতে হচ্ছে রাস্তায়। কিছুক্ষণ ঘোরার পরেই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, মাথা যেন ঘুরছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, এই সময় শরীর সুস্থ রাখতে ঘনঘন জল পান করতে হবে। ওআরএস বা নুন জল হলে আরও ভাল। তাছাড়া তরমুজ, আম জাতীয় সরস ফল খাওয়া উচিত। হঠাৎ বাইরে বেরোনোর পর কষ্ট হচ্ছে বুঝলে ছাওয়ায় বিশ্রাম নিতে হবে, চোখে মুখে জল দিতে হবে। জল পানও করতে হবে। শরীর কিছু সুস্থ হলেই তবেই ফের বাইরে বেরোনো। মাথায় টুপি রাখা, রোদ চশমা পরা অতি জরুরি। পরনে হালকা রঙের পোশাক পরাও জরুরি। জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (১) সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গি বলেন, “প্রচণ্ড দাবদাহে দিনে অন্তত তিন বার স্নান করা, ঘনঘন জল খাওয়া, শরীরকে রোদ থেকে বাঁচতে সেই ধরনের পোশাক পরা অত্যন্ত জরুরি। বাইরে বেরিয়ে অসুস্থ মনে হলেই ছাওয়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে, জল খেতেও হবে। এ ভাবেই নিজেদের সুস্থ রাখতে হবে।”

Advertisement

চূড়ান্ত গরমে ফুল-ফল-সব্জিরও ক্ষতি হচ্ছে। কাঁচা আম শুকিয়ে যাচ্ছে, ফেটে যাচ্ছে লিচু। বারবার সেচ দিয়েও অবস্থা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। মেদিনীপুর শহরেই রয়েছে কৃষি ও ভূমি সংরক্ষণ দফতরের কৃষি খামার। যেখানে রয়েছে আম, লিচু, মুসাম্বি গাছ। খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিক দেবকুমার পণ্ডা বলেন, “একটানা রোদের তাপে গাছেই অপরিণত আম শুকিয়ে যাচ্ছে। খসে পড়ছে। লিচু ফেটে যাচ্ছে। ঘনঘন সেচ দিয়েও রাখা যাচ্ছে না।”

সাধারণ চাষিদেরও মাথায় হাত। ঘনঘন সেচ দিতে যে বিস্তর খরচ। জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক রণজয় দত্ত বলেন, “ফল শুকিয়ে গেলে ফলন কমবে। গরমে মাকড়ের আক্রমণ বাড়ে, যা রস শুষে নেয়।” কিন্তু টানা বৃষ্টি না হওয়ায় গাছের পাতা, কাণ্ড, ফল, ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি গুনগত মানও কমে যাবে।” এই অবস্থায় বারবার সেচ দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে উদ্যান পালন দফতর জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন