সন্ধিপুজোয় সন্দেশ বলি চক্রবর্তী-বাড়ির পুজোয়

দুর্গাপুজোয় সন্দেশ বলি! পশু নয়, সন্ধিপুজোয় সন্দেশ বলি দিয়েই মাকে তুষ্ট করেন চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা। মেদিনীপুর শহরের পাটনাবাজার এলাকায় চক্রবর্তী পরিবারের পুজো অনেক পুরনো। যদিও এ পুজোর সঠিক বয়স সম্পর্কে ধারণা নেই বর্তমান প্রজন্মের। তাঁরা কেবল পাঁচ পুরুষের হিসেব জানেন।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩১
Share:

বন্দনা করা হয় এই স্থায়ী প্রতিমারই। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুজোয় সন্দেশ বলি!

Advertisement

পশু নয়, সন্ধিপুজোয় সন্দেশ বলি দিয়েই মাকে তুষ্ট করেন চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা।

মেদিনীপুর শহরের পাটনাবাজার এলাকায় চক্রবর্তী পরিবারের পুজো অনেক পুরনো। যদিও এ পুজোর সঠিক বয়স সম্পর্কে ধারণা নেই বর্তমান প্রজন্মের। তাঁরা কেবল পাঁচ পুরুষের হিসেব জানেন। তা থেকেই দেখা যাচ্ছে, পুজোর বয়স দেড়শো বছরেরও বেশি। প্রতিমা স্থায়ী। পুজোর আগে কেবল সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয় দেবী দুর্গাকে। শুদ্ধাচারে হওয়া এই পুজো ঘিরে চক্রবর্তী পরিবার নয়, পুরো পাটনাবাজার এলাকার মানুষের মধ্যে অন্য আকর্ষণ।

Advertisement

এ পুজোর প্রাচীনত্ব বা ইতিহাস সম্বন্ধে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে তেমন সম্যক ধারনা না থাকলেও মন্দির সম্বন্ধে পূর্ব পুরুষের কাছে শোনা কিছু তথ্য রয়েছে। যা অনেকটা রূপকথার মতো। বর্তমানে যেখানে মন্দির, সেখানে তখন জঙ্গল ছিল। জঙ্গলের মধ্যে প্রায়ই দেখা যেত একটি গাভি বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছে। মানুষের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে। এক সময় জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য উদ্যোগী হন সকলে। জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখা যায় যেখানে গাভিটি দাঁড়িয়ে থাকত সেখানে একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। যাকে ঘিরে তৈরি হয় মন্দির। কিন্তু যেখানে শিব থাকেন সেখানে তো দুর্গা থাকবেনই। এই ভাবনা থেকেই দুর্গাপুজোর চল। শিব মন্দিরের দেওয়ালেই চুন সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয় দুর্গার অবয়ব। কিন্তু কালের নিয়মে তা এখন সময় খসে পড়তে থাকে। ১৯৬৪ সালে নতুন করে সেই দেওয়ালেই তৈরি করা হয় দুর্গার অবয়ব। তাতেই পুজো হয় প্রতি বছর। যাবতীয় রীতি মেনে পুজো করেন পরিবারেরই সদস্য নগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, রথীন চক্রবর্তীরা। সপ্তমীতে পাড়ার লোকজনকে খাওয়ানো হয় প্রসাদস। নবমীতে ৫১ রকম ভোগ ও ৫১ রকম মিষ্টি দিতে হয় দেবীকে। ৫১ রকম ভোগ রান্না হোক বা মিষ্টি সংগ্রহ, তা যে কত কঠিন তা সকলেরই জানা। তবু কোনও বছর তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তারই সঙ্গে সন্ধিপুজোতে যেখানে ছাগ, মহিষের বলি হয়, নিদেন পক্ষে পশুপ্রেমিরাও আখ, চালকুমড়ো বলি দেন, এখানে সে রকম কোনও বলি নেই। পরিবারের সদস্যদের অনুমান, তাঁদের পূর্বপুরষেরা প্রান বলি দিতে চাননি। কারণ, যে পুজোয় অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির আগমন করা হয় সেখানে নিরীহ প্রান বলি হবে কেন? আবার বলিও দিতে হবে। এই মানসিকতা থেকেই হয়তো বাড়িতে বানানো সন্দেশ দু’টুকরো করে দেওয়ার রীতি চালু করেছিলেন পূর্বপুরষেরা। এটাই বলি!

আর একটি অলৌকিক ঘটনা রয়েছে পুজোকে কেন্দ্র করে। এই পুজোয় ২৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। যে প্রদীপের দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি থাকে পরিবারের সকলেই। কোনওভাবেই যেন একটি প্রদীপও না নিভে যায়। কারণ, প্রদীপ নিভে গেলেই বিপদ! বুঝতে হবে সেই বছর পরিবারের ক্ষতি অনিবার্য। কারও না কারও মৃত্যু ঘটবেই। রথীন চক্রবর্তীর কথায়, “কয়েক বছর আগে একটি প্রদীপ নিভে গিয়েছিল। তা দেখে বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই মা মারা গেলেন। শুধু একটি ঘটনা রয়েছে তা নয়। আরও কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই এই দিক নির্দেশের বিষয়টি আমরা সতর্ক ভাবে নজরে রাখি। সব সময় প্রদীপের দিকে তাকিয়ে থাকি।” পরিবারের সদস্য বাবলু চক্রবর্তীর কথায়, “শতাধিক বছর আগে তো দু’হাত ছাড়া সর্বজনীন পুজোর চল ছিল না। তখন শহরের বহু এলাকা থেকেই পুষ্পাঞ্জলী দিতে আসতেন বহু মানুষ। ফলে এই পুজোটি পরিবারের হলেও ওইদিক দিয়ে সবর্জনীন হয়ে উঠেছিল অনেক আগে থেকেই।” এখনও অবশ্য তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। পুজোর সময় পরিবারের যে সদস্যই বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকেন না কেন সকলে বাড়িতে হাজির হয়ে যান। পাড়ার সকলেও সোৎসাহে পুজোয় যোগ দেন। যে পুজোর সঠিক ইতিহাস না থাকায় প্রাচীনত্ব নিয়ে গর্ব থাকলেও তা প্রকাশ করতে পারেন না পরিবারের সদস্যরা। তাই এবার পুজোর প্রাচীনত্ব নিয়ে প্রামান্য তথ্য ঘেঁটে এবার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস রচনার চেষ্টাও করছেন রথীনবাবু। তাঁর কথায়, “উত্তর পুরুষ যাতে এক লহমার পরিবারের এই পুজোর ইতিহাসটুকু জানতে পারে, তাই যেটুকু প্রামাণ্য নথি রয়েছে তা লিখে রাখার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। তথ্য সংগ্রহের জন্য চেষ্টাও করছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন