কিষেনজি অস্ত্রে মুকুল বিঁধলেন অভি‌ষেককে

কিষেনজি প্রসঙ্গে যুব তৃণমূল সভাপতির মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের জল আরও গড়াল! ‘যুবরাজে’র রাজনৈতিক ‘অনভিজ্ঞতা’ নিয়ে এ বার কটাক্ষ করলেন তৃণমূল নেত্রীর প্রাক্তন সেনাপতি মুকুল রায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কিষেনজিকে খুন করেছে বলে শুক্রবার বেলপাহাড়ির সভায় তৃণমূল নেত্রীর সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করার পরেই সমালোচনায় সরব হন বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

কিষেনজি প্রসঙ্গে যুব তৃণমূল সভাপতির মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের জল আরও গড়াল! ‘যুবরাজে’র রাজনৈতিক ‘অনভিজ্ঞতা’ নিয়ে এ বার কটাক্ষ করলেন তৃণমূল নেত্রীর প্রাক্তন সেনাপতি মুকুল রায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কিষেনজিকে খুন করেছে বলে শুক্রবার বেলপাহাড়ির সভায় তৃণমূল নেত্রীর সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করার পরেই সমালোচনায় সরব হন বিরোধীরা। মুখ খুলেছিল কিছু মানবাধিকার সংগঠনও। এর মধ্যে শনিবার মুকুলের বক্তব্যে শাসক দলের অস্বস্তি আরও বাড়ল।

Advertisement

অভিষেকের মন্তব্য নিয়ে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানের পরে এ দিন প্রশ্নের জবাবে মুকুল বলেন, ‘‘ছোট ছেলে কী বলেছে, কী বৃত্তান্ত জানি না। তবে যে সময়ের ঘটনা, তখন আমি দলের খুব কাছে থেকে কাজ করছিলাম। যতদূর জানি, সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে। কী অর্থে কী বলেছে, দেখে বলতে হবে।’’ কিষেনজির মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষেই— ঘটনার পরে মমতা নিজে দাবি করেছিলেন। এ দিন কার্যত তারই পুনরাবৃত্তি করেন মুকুল। তার পরে অভিষেকের উদ্দেশে তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘তবে সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই কিছু বলতে গেলে আগে পরিণত হতে হয়!’’

বিড়ম্বনা সামলাতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলতে শুরু করেছেন, অভিষেক ‘তারুণ্যের আবেগে’ বেলপাহাড়িতে ওই মন্তব্য করে ফেলেছেন। ওই মন্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে— ব্যাখ্যা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বরং অভিষেককে বেলপাহাড়িতে গিয়ে সভা করার জন্য তাঁকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। এবং মুকুলের মন্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘যাঁরা অভিষেককে অনভিজ্ঞ বলছেন, তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করছেন।’’

Advertisement

তাঁর বক্তব্যে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে শুক্রবার আনন্দবাজারকে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কিষেণজির মৃত্যু হয়। আমি এটাই বলতে চেয়েছি। বিরোধীরা এটা নিয়ে অকারণ রাজনীতি করছেন।’’ ২৪ ঘণ্টা পরে‌ শনিবার প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও ঘনিষ্ঠমহলে অভিষেক জানিয়েছেন, মুখ ফস্কেই তিনি ‘হত্যা’ শব্দটি বলে ফেলেছেন। তবে একই সঙ্গে ঘনিষ্ঠমহলে তাঁর প্রশ্ন, কিষেনজির নেতৃত্বে অসংখ্য খুন, এমনকী একটি থানার ওসিকে অপহরণের মতো ঘটনা কি বিরোধীরা বিস্মৃত হয়েছেন?

বিরোধীরা কিন্তু এই নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিরও কাউকে খুনের অধিকার নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো যখন বলছেন, তাঁর পিসি কিষেনজিকে খুন করেছেন, মমতা কোনও প্রতিবাদও করলেন না! তা হলে মমতার বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলা হবে না কেন?’’ সিপিএমের তরুণ সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও আক্রমণ করেছেন মমতাকেই। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কিষেনজির মৃত্যুর পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র দশটি প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু মমতা তার জবাব দেননি। উত্তর দিলেন তাঁর ভাইপো।’’ কিষেনজির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সেই সময়ে রাজ্যে ‘এনকাউন্টারের রাজনীতি’ ফিরে এসেছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন ঋতব্রত। বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে কিষেনজিকে ব্যবহার করেছিল তৃণমূল। তার পরে তারাই দেখিয়ে দিয়েছে, কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরোলেই কিষেনজি!’’ তৃণমূলের এই নীতিই অভিষেক প্রকাশ্যে এনে ফেলেছেন বলে শমীকের মন্তব্য।

চার বছর আগে কিষেনজির মৃত্যুর পরে রাজ্য সরকার যে রিপোর্ট দিয়েছিল, অভিষেকের মন্তব্য তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে— বলছে প্রশাসনের একটি অংশ।

২০১১-র ২৪ নভেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনির বুড়িশোল জঙ্গলে মৃত্যু হয় কিষেনজির। ওই অপারেশনে রাজ্য পুলিশের হয়ে নেতৃত্বে ছিলেন তদানীন্তন ঝাড়গ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) অলোক রাজোরিয়া। কিষেনজির মৃত্যুর ঘটনার প্রথম এফআইআর-ও করেন রাজোরিয়াই। এর পরে রাজোরিয়াকে শৌর্য পদক দেওয়ার জন্য রাজ্য যে সুপারিশ পাঠায় কেন্দ্রের কাছে, তার সঙ্গে

জুড়ে দেওয়া রিপোর্টে তুমুল সংঘর্ষের কথা বলা হয়েছিল— বলছে প্রশাসনের একাংশ।

ওই সূত্রের বক্তব্য, রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সংঘর্ষে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে লড়াই করেন রাজোরিয়া। যদিও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা পাল্টা রিপোর্ট দেয়, কিষেনজির মৃত্যুর ঘটনায় কৃতিত্ব একা অলোক রাজোরিয়ার নয়। সেন্ট্রাল ইনসার্জেন্সি ফোর্সের (সিআইএফ) অবদানও ছিল। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই দু’বার সুপারিশ ফেরত পাঠায় কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য তৃতীয় বার তা পাঠালে তা মেনে নেওয়া হয়। শৌর্য পদক পান রাজোরিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন