Coronavirus

ঘরে ফিরে ঘর-বন্দি, ‘কভি নেহি’!

করোনা-ত্রাসে ঘরে ফেরা ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বিবাদে কান ঝালাপালা স্থানীয় পুলিশের।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৬:১৭
Share:

ফাইল চিত্র

হাতাহাতি থেকে লাঠালাঠি— ডোমকলের পুরনো প্রবাদ!

Advertisement

পড়শির ছাগল বাগানের গাছ খেয়ে যাওয়া কিংবা ও বাড়ির তাল পাতা এ বাড়ির উঠোনে আছড়ে পড়া, এমন নিতান্তই ছোট কারণে বিবাদ এবং তা থেকে খুনোখুনির ঘটনায় অভ্যস্ত ডোমকলে এ বার বিবাদের নয়া কারণ খুঁজে পেয়েছে।

করোনা-ত্রাসে ঘরে ফেরা ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের বিবাদে কান ঝালাপালা স্থানীয় পুলিশের। পুলিশের দাবি, ঘরে ফিরে ঘর-বন্দি থাকতে নারাজ ভিন রাজ্য কর্মরত সেই সব শ্রমিকেরা। মোটরবাইক হাঁকিয়ে কেউ বা দল বেঁধে গ্রামের মাচায় বসে দিব্যি খোশগল্প জুড়ছেন হামেশাই। আর তাতেই আপত্তি তুলে গ্রামবাসীদের একাংশের সঙ্গে তাঁদের বিবাদ গড়াচ্ছে হাতাহাতিতে।

Advertisement

বিভিন্ন এলাকা থেকে এমন অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। কোথাও কোথাও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কোথাও আবার গ্রামবাসীদের চাপে পড়েই হোম কোয়রান্টিনে যেতে বাধ্য হয়েছেন সেই সব শ্রমিকেরা, এমনই দাবি। রানিনগর এক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আমিনুল হাসান বলেন, ‘‘আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন এলাকায় এই এক সমস্যা তৈরি হয়েছে, প্রায়শই নালিশ আসছে, কী যে করি!’’

ডোমকলের কয়েক হাজার শ্রমিক মূলত কাজ করেন কেরলে, সেই রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেহেতু সর্বাধিক, গ্রামবাসীদের মধ্যে তাই আতঙ্কও ছড়াচ্ছে দ্রুত। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমাদের গ্রামে শতাধিক শ্রমিক দিন কয়েকের মধ্যেই ফিরেছে কেরল থেকে, তাদের বাড়িতে থাকার কথা বলতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা। ঘরে থাকার কথা বললেই গন্ডগোল তৈরি করছে তারা। বচসা প্রায়ই হাতাহাতিতে গড়াচ্ছে।’’ শুধু ডোমকল নয়, গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়েই ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এখন থানায় আর অন্য কোনও বিষয় নিয়ে অভিযোগ আসছে না, মিনিটে মিনিটে ফোন পাচ্ছি ভিন রাজ্য থেকে ফিরে শ্রমিকরা ঘরে থাকছে না, সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা।’’

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের বিভিন্ন স্টেশনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরেই তাঁরা ভেবে নিচ্ছেন রোগের কোনও সম্ভাবনা নেই তাঁদের। নিজেকে পুরোপুরি সুস্থ মনে করছেন তাঁরা। গাজোয়ারি করেই তাঁরা কোয়রান্টিনে না থেকে কভি নেহি বলে বেরিয়ে পড়ছেন। এমন করলে তো মহা বিপদ!’’ ডোমকলের এসিএমওএইচ মামুন রশিদ বলেছেন, ‘‘আসলে ওঁদের ভয় আইসোলেশনে পাঠানো হবে। এমন চলতে তাকলে সেই ভীতি "বিশেষ করে ডোমকলের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের কাছে। কারণ এখানকার কয়েক হাজার শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজ করেন, যারা এই সময়ে তড়িঘড়ি ঘরে ফিরেছেন। আমরা প্রত্যেক শ্রমিকের বাড়িতে চিঠি পাঠিয়েছি, এরপরেও যদি তারা গৃহবন্দি না হয় তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন