বছরখানেক আগের কথা। ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট বাঙালি জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার সারা দেশকে এক সূত্রে গেঁথেছিলেন। রিও অলিম্পিকে জিমন্যাস্টিকের ফাইনাল রাউন্ডে দীপার প্রদুনোভা ভল্ট সারা দেশকে আলোড়িত করেছিল। পদক জিততে না পারলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন জিমন্যাস্টিক কিছুটা হলেও অর্থানুকূল্য পাবে।
ঠিক এক বছরের মাথায় সেই ১৪ অগস্ট অ্যাক্রোব্যাট জিমন্যাস্টিকের আন্তর্জাতিক এক প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করার চিঠি হাতে পান আর এক বাঙালি জিমন্যাস্ট, নবদ্বীপের টিঙ্কু সরকার। কিন্তু, সেই প্রতিযোগিতায় হয়তো তাঁর যোগ দেওয়া হবে না। কারণ, সেই অর্থাভাব। মিক্সড অ্যাক্রোব্যাটে তাঁর সঙ্গি পূর্বস্থলীর অভিজিৎ দেবনাথ কোনও রকমে টাকা জোগাড় করতে পারলেও টিঙ্কুর জন্য তাঁরও যাওয়া হবে না। বছর দুয়েক আগে টাকার অভাবে আরও এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সুযোগ ফস্কেছিল তাঁদের। এবার অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও টাকার জোগাড় করে উঠতে পারেননি তাঁরা।
আগামী ১৪-২০ সেপ্টেম্বর ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল জিমন্যাস্টিক (ফিগ) পরিচালিত দশম অ্যাক্রোব্যাটিক জিমন্যাস্টিকস এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসছে কাজাখস্তানের অলমাটিতে। সেখানে সিনিয়র বিভাগে মিক্সড পেয়ারে অংশ নেওয়ার কথা অভিজিৎ-টিঙ্কুর।
অ্যাক্রোব্যাটিক জিমন্যাস্টিকসের মিক্সড পেয়ারে ভারতসেরা বাংলার ওই দুই জিমন্যাস্ট সম্প্রতি হরিয়ানার অম্বালাতে অনুষ্ঠিত সিলেকশন ট্রায়ালে নিজেদের বিভাগে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে নামার যোগ্যতা অর্জন করেন। জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া এবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ১৬ জনের যে দল পাঠাচ্ছে, তারমধ্যে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করছেন ওই দুজনই। এখনও পাথেয় সংগ্রহ করতে পারেননি টিঙ্কু। ফেডারেশন চিঠি দিয়ে তাঁদের নির্বাচিত হওয়ার কথা জানানোর পাশাপাশি অংশগ্রহণের খরচ বাবদ মাথাপিছু ৮৫ হাজার টাকার একটি ফর্দও পাঠিয়েছে। যা প্রতিযোগীদের বহন করতে হবে। সেই টাকা জোগাড়ে করতে দরজায় দরজায় ঘুরছেন টিঙ্কু।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশ গ্রহণের সুযোগ স্রেফ টাকার অভাবে হাতছাড়া হওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগেও হয়েছে বাংলার অন্যতম সেরা দুই জিমন্যাস্টের। সে আক্ষেপ আজও যায়নি অভিজিৎ টিঙ্কুর। অভিজিৎ বলেন, “সপ্তম এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫ বছরের ঊর্দ্ধ বিভাগে আমরা মিক্সড পেয়ারে সুযোগ পেয়েছিলাম। সেবারও লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন ছিল। আমরা যোগাড় করতে পারিনি।”
ছবিটা এবারেও প্রায় একই রকম। বদলের মধ্যে সেদিনের বেকার অভিজিৎ ইতিমধ্যে বর্ধমানের বাঘনাপাড়া হাইস্কুলে শরীরশিক্ষার শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছেন। ফলে স্কুল এবং অনান্য জায়গা থেকে ধারদেনা করে আটবারের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন অভিজিৎ টাকার ব্যবস্থা করতে পারলেও, টিঙ্কু সেই তিমিরেই।
নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুরের বাসিন্দা পিতৃহীন টিঙ্কুর পরিবারের রোজগেরে মানুষ বলতে মা কমলা সরকার। খাদির সুতো কাটেন। আছে ছোট দুইভাই। চারজনের দুবেলা খাওয়াপড়ার ব্যবস্থা করার পর মেয়ের বিদেশ যাওয়ার জন্য অত টাকার কথা ভাবতেই পারেন না কমলাদেবী। তাই টাকার জন্য দরজার দরজায় ঘুরছেন টিঙ্কু। সরকারি দফতর থেকে পরিচিত নানা জনের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন টিঙ্কু। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন টিঙ্কু। ব্যক্তিগত ভাবে দশ হাজার টাকা দিয়েছেন নবদ্বীপ থানার আইসি সুবীর পাল। ‘‘এর বেশি এখনও জোগাড় করে উঠতে পারিনি।” হতাশা ঝরে টিঙ্কুর কথায়।