সাতের বেশি নয় অটোয়, জারি ফরমান

অটো উল্টে মৃত্যু হয়েছিল বিদিশা দাস নামের এক বালিকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:২৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

দিনটা ছিল ৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার। মায়াপুর-বামনপুকুর এক নম্বর পঞ্চায়েতের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা দয়াল শেখ নিয়মমাফিক রাস্তার বাঁ দিক দিয়ে সাইকেল চড়ে যাচ্ছিলেন। বেলা তখন এগারোটা। উল্টো দিক থেকে আসা যাত্রী বোঝাই অটোর নিয়ম মানার দায় ছিল না। বেপরোয়া গতিতে ছুটে এসে সরাসরি ধাক্কা মারে দয়াল শেখকে। মারাত্মক ভাবে আহত বছর বাহান্নের ওই ব্যক্তি কয়েক ঘণ্টা পর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে মারা যান।

Advertisement

ঘটনাটি বছর দুয়েক আগের। সেটা ছিল অক্টোবর মাস, ২০১৭। অটো উল্টে মৃত্যু হয়েছিল বিদিশা দাস নামের এক বালিকার। প্রবল গতিতে ছুটে আসা অটো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় উল্টে গেলে মৃত্যু হয় ওই বালিকার।

নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর রুটে এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। বেপরোয়া গতিতে কোনও নিয়ম না মেনে অটো চালানোই ওই পথে দস্তুর। সাতের জায়গায় দশ জন যাত্রী তুলে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলা অটোর চালকেরা অবশ্য এ নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন। তাই প্রতিটি দুর্ঘটনার পর দু’দিন হইচই হয়। সে সময়টা একটু সমঝে চলতে হয়। তার পর আবার যথাপূর্ব‌ং।

Advertisement

এমনটাই চলছিল। নিরুপায় মানুষ চেপে রেখেছিলেন যাবতীয় ক্ষোভ। কিন্ত দয়াল শেখের মৃত্যু ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকা জুড়ে। ক্ষুব্ধ জনতা রাস্তার উপরে বাঁশ, গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে। অটো চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর মানুষ এতটাই খেপে গিয়েছিল যে পরের কয়েক দিন অটো চালকেরা সাহস পাননি পথে নামতে।

এর পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। জানিয়ে দেওয়া হয় অটোয় সাত জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। অটো নিয়ে সাধারণের ক্ষোভের পিছনে প্রধান কারণ মূলত অতিরিক্ত যাত্রী তোলা এবং অটোর বেপরোয়া গতি। এলাকার মানুষের কথায়, বেশির ভাগ অটো এতটাই বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে যে, ছোটখাট চোট-আঘাতের ঘটনা নিয়মিত ঘটতে থাকে। অটোর নিয়মভাঙা চলে যাত্রীর সংখ্যা নিয়েও। দশ জনের কম যাত্রী নিয়ে কোনও অটো এই রুটে চলতে চায় না। তুলনায় বড় অটোগুলি চালকের বাঁ পাশে এক জন, মাঝের সিটে চার জন, পিছনে চার জন এবং চালকের ডান দিকে এক জন যাত্রীকে নিয়ে বিপজ্জনক ভাবে চলাচল করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নবদ্বীপ ঘাট বা কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরুর সময়ে যাত্রী দশ জন না হলে অটো ছাড়েন না চালকেরা।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর পর তাই বেআইনি যাত্রী পরিবহণে লাগাম টানতে চাইছে প্রশাসন। পুলিশের নির্দেশে এখন থেকে অটোয় সাত জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। দিন কয়েক যাবৎ সেই মতো সাত জন যাত্রী নিয়েই চলাচল করছে অটোগুলি। যদিও এই নিয়ম কত দিন মানা হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে অনেকেরই।

এ দিকে, অটোচালকদের দাবি, দশ জনের পরিবর্তে সাত জন নিয়ে অটো চালালে খরচ পোষাবে না। সে ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়াতে হবে।

নবদ্বীপ ব্লক তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি তথা স্বরূপগঞ্জ রেলবাজার রিক্রিয়েশন ক্লাব মাঠের অটোস্ট্যান্ডের দেখভাল করেন কল্লোল কর। তিনি বলেন, “জীবিকার জন্য অটো কেউ চালাতেই পারেন। কিন্ত তাই বলে মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার নেই। দশ কেন, এখানে চালকের বাঁ পাশে দু’জনকে নিয়ে মোট এগারো জন যাত্রী সমেতও চলাচল করে অটো। যাত্রীর সংখ্যা যাতে সাতই থাকে, সে জন্য প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিক।”

পুলিশ জানিয়েছে, যাত্রীসংখ্যার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন