খেলা চলছে বহরমপুর সংশোধনাগারে।—নিজস্ব চিত্র।
নাটক, নৃত্যনাট্য, ছবির প্রদর্শনী হয়ে গিয়েছে। এ বার কয়েদিরা কারাগারের বাইরে ফুটবল মাঠেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লিগের খেলায় পেশাদার ফুটবল টিমের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে লড়ছেন তাঁরা। রাজ্যের ৬টি সেন্ট্রাল জেলের কয়েদিদের থেকে বাছাই ফুটবলার নিয়ে গড়া টিমের নাম ‘ইনমেটস ফুটবল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন।’ শেষ খেলায় ব্যারাকপুর যুব সংঘকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে তারা।
দমদম সেন্ট্রাল জেল-লাগোয়া ফুটবল মাঠে ফের এই রবিবার (২১ জুন) দেখা যাবে কয়েদিদের দলকে। খেলা আছে বেলঘরিয়া নিমতা স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে। চারদিন পর ২৫ জুন পানিহাটির ফুটবল মাঠে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলায় তাঁদের বিপক্ষ পানিহাটি স্পোর্টিং ক্লাব।
কলকাতা ফুটবল লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর কর্ণধার, তথা প্রসিদ্ধ ক্রীড়া ভাষ্যকার মিহির দাস কয়েদিদের টিম ‘ইনমেটস ফুটবল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর কোচ। মিহিরবাবু বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগের কয়েদিদের নিয়ে ফুটবল টিম গড়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো রাজ্যের ছ’টি সেন্ট্রাল জেল থেকে ছ’জন করে, মোট ৩৬ জন আবাসিক বাঝাই করা হয়। তারপর জেলের ভিতরের মাঠে প্রশিক্ষণ শুরু হয়।’’
টিমের ক্যাপ্টেন সোমনাথ মিস্ত্রি খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আবাসিক। একদা এরিয়ানের জুনিয়ার টিমে খেলেছেন। বছর ছয়েক আগে ফাঁসির আদেশ হয়েছিল রবিন মল্লিক নামে এক কয়েদির। পরে হাইকোর্টের রায়ে ফাঁসি রদ হয়। বর্তমানে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রবিন ওই টিমের গোলকিপার। জেলের ভিতর আফতাব আনসারিকে মোবাইল ফোন সরবরাহ করায় অভিযুক্ত মঙ্গল টুডু রাইট ব্যাক। টিমে রয়েছেন বাংলাদেশের চট্টোগ্রামের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি নুরুল হাসান।
কলকাতার মাঠে আইএফএ লিগে খেলতে চেয়ে আবেদনও করেছিলেন মিহিরবাবু। আইএফএ থেকে বলা হয়েছে, আগে পঞ্চম ডিভিশনে খেলতে হবে। তার দু’বছর পর কলকাতায় আইএফএ লিগে খেলার সুযোগ মিলবে।
এই দলটি গত বছর থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলায় অংশ নিচ্ছে। সোদপুর, আগরপাড়া, টিটাগড় ও দমদমের খোলা মাঠে খেলেছে। গত বছর জেলা লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলায় তৃতীয় স্থান পেয়েছিল দলটি। এ বছরের লিগে ইতিমধ্যে দু’টি খেলায় নেমেছে। প্রথম খেলায় সুভাষনগর স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে ৪-৩ গোলে পরাজিত হয়। দ্বিতীয় দিনের খেলায় ৩-০ গোলে ব্যারাকপুর যুব সংঘকে হারিয়ে মনোবল ফিরে পেয়েছে।
এডিজি অধীর শর্মা বলেন, ‘‘রাজ্যের ৬টি সেন্ট্রাল জেলের মধ্যে বহরমপুর সেন্ট্রাল জেল সব থেকে বড়। তাই ভাল অনুশীলনের জন্য ওই টিমের প্লেয়ারদের বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ১৩-১৮ জুন বিশেষ ক্যাম্প করে ফের তারা দমদম জেলে ফিরে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা লিগের খেলায় অংশ নিতে।’’
কয়েদি ফুটবলারদের জন্য জেলের ভিতরে বরাদ্দ হয়েছে বিশেষ খাবার। বছরে দু’ বার বিশেষ প্যারোলে মোট ২১ দিন বাড়িতে থাকতে পাওয়ার অনুমোদনও মিলেছে। খোলা মাঠে খেলার সুযোগে আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের বাড়তি সুযোগও মিলেছে।
তবে সব থেকে খুশির খবর, পরিবারের লোকের কাছে সোমনাথ মিস্ত্রি, রবিন মল্লিকরা আর ‘খুনি’ বা ‘ধর্ষক’ নন। তাঁরা এখন ‘ফুটবলার’।