BJP

ফোনই ধরছেন না দাদা, চিন্তায় শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠরা

সভাধিপতি মোশারফ হোসেন গত তিন সপ্তাহ থেকে তৃণমূলের সভা,সমিতি এড়িয়ে চলছেন। অনেকেই একে দলবদলের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

আর মুর্শিদাবাদের ফোন ধরছেন না শুভেন্দু অধিকারী। উত্তর দিচ্ছেন না মেসেজেরও। কেউ কেউ কখনও ফোনে পেয়ে গেলে ফোনে দাদার সেই পরিচিত গলার স্বরটি কিন্তু পাচ্ছেন না। এ সব অভিযোগ করছেন জেলায় ‘দাদার অনুগামী’ বলে পরিচিত নেতারাই। এমনকি এক অনুগত বিড়ি মালিক কয়েকদিন আগে শুভেন্দুকে ফোে পেয়ে কিছু অনুরোধ করার পরে পরিষ্কার উত্তর পেয়েছেন, ‘মুর্শিদাবাদে বিজেপির সাংগঠনিক কোনও বিষয়ে তিনি নাক গলাবেন না’। তাতে সংশয় বেড়েছে এ জেলার শুভেন্দু অনুগতদের। তাঁদের মধ্যে যাঁরা কোনও অবস্থাতেই বিজেপিতে যেতে পারবেন না, তাঁরা পড়েছেন আরও মুশকিলে। কংগ্রেসের দিকে পা বাড়িয়েও তাঁদের কেউ কেউ এখনও শুভেন্দুর মুখের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বলে প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর।

Advertisement

দলের মধ্যে শুভেন্দুর বিদ্রোহী মনোভাবে অনেকটাই খুশি হয়েছিলেন এ জেলায় তার অনুগতরা। তাঁরা অনেকেই শুভেন্দু কী করবেন, সে দিকে চেয়ে রয়েছেন। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ ধরে শুভেন্দু ফোন না ধরায়, মেসেজ এর উত্তর না দেওয়ায়, আপাতত জেলায় কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন তার অনুগত বলে পরিচিত সেই সব রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা।

এদের অনেকেই জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব রেখে চলছিলেন শুভেন্দুর দিয়ে তাকিয়ে। তাঁরাই জানাচ্ছেন, প্রথমদিকে শুভেন্দু তাদের চুপচাপ থাকতে বলে গোপনে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। শুধু তাই নয়, এক এক করে যখন তৃণমূলের পদগুলো ছাড়ছিলেন, তখন শুভেন্দু একবার বেলডাঙায় ও একবার মারগ্রামে এসেছিলেন। অনুগামীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

Advertisement

সুতির এক শুভেন্দু অনুগামী নেতার কথায়, “ক’দিন আগেও দু বেলা ফোনে কথা হয়েছে। কথা ছিল এক সঙ্গেই দল ছাড়ব। কিন্তু তা হয়নি। পরে আশ্বাস ছিল জেলায় এসে বড়সভা করে তার সমর্থকরা তৃণমূল ছেড়ে দাদার হাত ধরে যোগ দেবেন নতুন দলে। কিন্তু তা-ও হয়নি। তাই এখনও তৃণমূলে আছি খাতায় কলমে, কিন্তু দলের কোনও কর্মসূচিতে নেই।”

এই নেতা এক সময় তৃণমূলের পদাধিকারী ছিলেন। শুভেন্দু অন্ত প্রাণ। দাদার বাড়িতেও গিয়েছেন বহু বার। যোগ দিয়েছেন মেদিনীপুরে শুভেন্দুর সমবায়ের সভাতেও। গেছেন খরগ্রামে মোফিজুদ্দিনের স্মরণ সভাতেও। তিনি বলছেন, “দাদাকে ফোনে পাচ্ছি না। আগে মেসেজের উত্তর দিতেন, এখন তাও দেন না। কথা ছিল তিনি দল ছাড়ার পর বিজেপিতে যোগ দিয়ে মুর্শিদাবাদে আসবেন। সেখানেই যোগ দেওয়াবেন তার অনুগতদের। কিন্তু এখন মেদিনীপুর, কলকাতাতেই আটকে রয়েছেন। অথচ মুর্শিদাবাদে আসার কোনও কর্মসূচি নেই তার।”

মুর্শিদাবাদে বিজেপির দলীয় সিদ্ধান্তে শুভেন্দু নাক গলাবেন না, এ কথা শুনে তাঁর অনুগামীরা হতাশ। দলের এক জেলা পরিষদ সদস্য বলছেন, “এমনটা যে হবে তা আমরা ভাবিনি। বিজেপিতে যে তিনি যাবেন তা আগেই জানিয়েছিলেন। আশা ছিল জেলার দু তিনটি কেন্দ্রে হয়ত তার অনুগতদের বিজেপির টিকিট পেতে অসুবিধে হবে না। কিন্তু শুভেন্দুবাবুর এই কথার পর আমরা কিছুটা হতাশ।”

এক জেলা পরিষদ সদস্যের কথা, “জেলা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্যেরই শুভেন্দুর উপর দুর্বলতা আছে। কিন্তু জঙ্গলমহলে যা সম্ভব তা মুর্শিদাবাদে সম্ভব নয়। তাই তৃণমূল ছাড়তে পা বাড়িয়ে থাকলেও বিজেপিতে যেতে রাজি হচ্ছেন না অনেকেই। তারা চাইছেন তৃণমূল যদি ছাড়তেই হয় তবে কংগ্রেসে যেতে।”
তবে ফেব্রুয়ারিতে জেলার রাজনৈতিক চিত্র বদলে যাবে ইঙ্গিত দিচ্ছেন অনেকেই।

সভাধিপতি মোশারফ হোসেন গত তিন সপ্তাহ থেকে তৃণমূলের সভা,সমিতি এড়িয়ে চলছেন। অনেকেই একে দলবদলের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন। যদিও সোমবার সভাধিপতি একগাল হেসে বলেন, “মান অভিমান নিয়ে আমি এখনও তৃণমূলেই আছি।” তবে রহস্য বাড়িয়েছেন জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস। বলছেন, “সময় হলেই বড় খবর পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন