অসাড় দেহ, হাল ছাড়েনি স্যমন্তক

শরীরে সাড় নেই তার, কিন্তু মন অদম্য। তাকে সম্বল করেই মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছে আঠারোয় পা দেওয়া স্যমন্তক সরকার। 

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক 

করিমপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

শরীরে সাড় নেই তার, কিন্তু মন অদম্য। তাকে সম্বল করেই মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছে আঠারোয় পা দেওয়া স্যমন্তক সরকার।

Advertisement

করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সে। ছোটবেলা থেকে দুরারোগ্য ‘ডুসেন মাস্কুলার ডিসট্রফি’ রোগে আক্রান্ত। এই রোগে ধীরে-ধীরে শরীরের সব মাংসপেশী অকেজো হয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়। একসময় রোগীর মৃত্যু হয়। এই রোগ পুরোপুরি সারানোর কোনও চিকিৎসা এখনও নেই। এর সব ওষুধও ভারতের বাজারে মেলে না। যতটুকু মেলে তার বেশিরভাগই অত্যন্ত দামি। ফলে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে রোগীর পরিবারের পক্ষে। স্যমন্তকের চিকিৎসাতেও তার পরিবারের সব সঞ্চয় শেষ। কিন্তু হার মানছে না স্যমন্তক। পাশে আছেন তার বাবা-মাও। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দিচ্ছে সে। সিট পড়েছে করিমপুরের আনন্দপল্লির যমশেরপুর বিএন উচ্চ বিদ্যালয়ে। হাতে আর জোর নেই তার। তাই পরীক্ষা দিতে হচ্ছে রাইটার নিয়ে।

স্যমন্তকের বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সুব্রত সরকার বলেন, “ছোটবেলায় ও স্বাভাবিক ছিল। চার বছর বয়সে হঠাৎ হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়। কলকাতা, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, নিউ দিল্লি ও হরিদ্বারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছি। সব জায়গা থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যত দিন যাবে ওর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে যাবে।’’ গত নয় বছর ধরে স্কুলে যেতে পারে না। বাড়িতেই পড়াশোনা করে স্যমন্তক।

Advertisement

এখন বেশিরভাগ সময় তাকে শুয়ে থাকতে হয়। ভাল ছবি আঁকত। এখন পেনসিল ধরতে পারে না। মা সঞ্চিতা দেবীর কথায়, “ ছোটবেলায় নিজের রোগ সম্পর্কে তেমন বুঝত না। এখন যত বড় হচ্ছে তত বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারাচ্ছে। নিজের বই নিজে তুলতে পারে না। অসহায় হয়ে মাঝে মাঝেই বিরক্ত হয়ে ওঠে।” তাঁর আক্ষেপ, “বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে চায়, পারে না। তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে চ্যাট করে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখে। মহাকাশ নিয়ে তার অনেক কৌতূহল রয়েছে। মহাকাশ নিয়ে গল্পও লিখছে।” স্যমন্তক বলে, “প্রথম তিনটি পরীক্ষাই ভাল হয়েছে। নবম শ্রেণি থেকে মা ও শিক্ষক সত্যজিৎ ঘোষ আমাকে পড়িয়েছেন। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বিছানা ছেড়ে বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। ফেলুদা প্রিয় চরিত্র। বড় হয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী হতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন