প্রধান শিক্ষকের টেবিলে বাজেয়াপ্ত সামগ্রী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
টেবিলের উপরে সাজানো লোহার পাঞ্জা, ছুরি, কাঁচি, ধারালো ব্লেড, বেল্ট, আতস কাচ-সহ একাধিক জিনিসপত্র। বহরমপুরের সৈয়দাবাদ মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জসিমউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের কাণ্ডটা এক বার দেখেছেন! এ সব নিয়ে কেউ স্কুলে আসে, বলুন তো!’’
বহরমপুরের ওই স্কুলের পড়ুয়াদের থেকে গত দু’তিন বছরে প্রায় এক বস্তা এমন জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে। জসিমউদ্দিন বলছেন, “প্রথমে নজরে আসে কয়েক জন পড়ুয়া হাতে নানা ধরনের ব্যান্ড, গলায় মালা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এ সবের পাশাপাশি মোবাইল, ছুরি, কাচি, ব্লেডও নিয়ে আসছে পড়ুয়ারা। তার পরেই স্কুলে অভিযান শুরু হয়।” স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনই স্কুলে আসা পড়ুয়াদের থেকে এমন কিছু না কিছু জিনিস উদ্ধার হয়। তাদেরকে নিষেধ করার পাশাপাশি অভিভাবকদের ডেকেও বিষয়গুলি জানানো হয়। কী ভাবে পড়ুয়াদের থেকে এ সব উদ্ধার করা হল? প্রধান শিক্ষকের দাবি, ‘‘পড়ুয়াদের উপরে বিশেষ নজর রাখা হয়। তা ছাড়া স্কুলে বেশ কিছু পড়ুয়া আমাকে সাহায্য করে। ওরা গোয়েন্দার মতো আমাকে খবর দেয়। অন্য পড়ুয়াদের কাছে অবশ্য ওদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।’’
তেমনই এক ‘গোয়েন্দা’ পড়ুয়া বলছে, ‘‘যারা এ সব নিয়ে আসে, কোনও না কোনও সময় তারা সেগুলো বের করে। আর আমরাও দেখে নিয়ে চুপিসাড়ে খবর দিই প্রধানশিক্ষককে।” শুধু পড়ুয়ারা নয়, অন্য শিক্ষকেরাও নানা সময় এ সব উদ্ধারে সহায়তা করেন।
গত দু’তিন বছরে অন্ততপক্ষে ৩০টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, বেশ কয়েকটি আইপড, ঢালাই লোহার আংটি, স্টিলের ও প্লাস্টিকের ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড, লোহার পাঞ্জা, বেল্ট, আতস কাচ, চার রকমের ছুরি, রুদ্রাক্ষ, পুতির মালা, ঘড়ি, ইলেক্ট্রনিক্স মোটর, বাঁশি, লাট্টু, তাস, ইয়ারফোন, লোহা ও পিতলের মালা, চৌম্বক, তালা-চাবি, উদ্ধার হয়েছে।
পড়ুয়ারা এ সব স্কুলে আনে কেন?
স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এ সব ছুরি-কাঁচি নিয়ে কেউ কখনও মারপিট করেছে বলে খবর নেই। তবে সাইকেলের সিট, ব্যাগ কেটে দেওয়া, টিফিন পিরিয়ডে পেয়ারা কাটা, কখনও কখনও সহপাঠীদের ভয় দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘ফ্রেন্ডশিপ ডে-তে এক বন্ধু ব্যান্ড উপহার দিয়েছিল। সেটা পরেই স্কুলে এসেছিলাম। আমি শুধু বলেছিলাম, ‘এটাই তো এখন ফ্যাশন’। তার পরে ব্যান্ড খুলে নিয়ে স্যর এমন বকুনি দিয়েছিলেন যে তার পর থেকে আর ব্যান্ড পরি না।’’