(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ ঘিরে আরও বাড়ল রাজনৈতিক উত্তাপ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করার ভঙ্গিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বললেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে অনেক নাম বাদ পড়বেই। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ‘সতর্কবার্তা’ দিয়েছিলেন বিএলওদের উদ্দেশে। কারও নাম যেন বাদ না পড়ে, রাজ্য সরকারের কর্মী হিসাবে তা নিশ্চিত করতে বলেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শুভেন্দু দাবি করলেন, ভোটার তালিকা থেকে ‘অবৈধ’ এবং ‘ভুয়ো’ নাম বাদ যাওয়া কেউ আটকাতে পারবেন না।
বিজেপির রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কোনও নাম বাদ যেতে দেবেন না। আমি বলছি, নাম বাদ যাবেই।’’ শুভেন্দুর কথায়, ‘‘রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, মৃত ভোটার, একাধিক জায়গার ভোটার তালিকা নাম থাকা ভোটার এবং মুখ্যমন্ত্রী ও আইপ্যাকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হওয়া ভুয়ো ভোটারদের নাম কিছুতেই তালিকায় থাকবে না। এই সব নাম কাটা পড়বেই।’’ বাংলাদেশি ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলতে তিনি কাদের বোঝাতে চাইছেন, সে ব্যাখ্যাও বিরোধী দলনেতা স্পষ্ট ভাবে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টানরা চলে এসেছেন, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী নন। তাঁরা সিএএ-র মাধ্যমে বৈধ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন।’’
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাক প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে অনেক ভুয়ো নাম ভোটার তালিকায় ঢুকিয়ে রেখেছে। এই সব ভোটারের কোনও অস্তিত্ব নেই বলে শুভেন্দুর দাবি। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কোনও নির্বাচনেই তৃণমূল প্রকৃত জনমত পেয়ে জেতেনি, এই ভুয়ো ভোটারদের জোরে জিতেছে বলে তিনি দাবি করেন। ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১০ বছরে রাজ্যের ৮০টি বিধানসভা কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি হয়েছে বলে শুভেন্দু দাবি করেন। এই বৃদ্ধি ‘অস্বাভাবিক’ বলেও তাঁর অভিযোগ। ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’য় এই সব ‘গরমিল’ ধরা পড়ে যাবে বলে বিরোধী দলনেতা মনে করছেন।
ভোটার তালিকার সমীক্ষা তথা সংশোধনের জন্য ‘বুথ লেভেল অফিসার’ (বিএলও) নিয়োগের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গে অনিয়ম চলছে বলে শুভেন্দুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতির কথা অনুযায়ী এগরার মহকুমাশাসক তথা ইআরও ৮৪ জন আইসিডিএস এবং আশা কর্মীকে বিএলও হিসাবে নিয়োগ করেছেন। খবর পেয়েই আমি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে জানাই। কারণ, এটা বেআইনি। যে বুথে স্থায়ী সরকারি কর্মী রয়েছেন, সেখানে অস্থায়ী বা আংশিক সময়ের কর্মীদের বিএলও হিসাবে নিয়োগ করা যায় না।’’ শুভেন্দুর অভিযোগ, ইআরও নিয়োগের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানছে না কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দেশিকা। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘গোটা দেশে এই নির্দেশিকা জারি রয়েছে যে, মহকুমাশাসক ছাড়া অন্য কেউ ইআরও হতে পারবেন না। কিন্তু এখানে মুখ্যসচিব সেই নির্দেশিকা লঙ্ঘন করছেন। সে বিষয়েও অভিযোগ জানিয়েছি।’’ ইতিমধ্যেই কোন কোন এলাকা বা জেলা থেকে এই সব ‘অনিয়মের’ খবর তিনি পেয়েছেন, তা-ও শুভেন্দু উল্লেখ করে দিয়েছেন সাংবাদিক বৈঠকে। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘ভাবছে আরিজ আফতাবের (প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক) জমানা বোধ হয় এখনও রয়েছে। সব ম্যানেজ হয়ে যাবে। এ বার আর তা হবে না।’’ ভোটার তালিকায় ‘ভুয়ো’ এবং ‘অবৈধ’ ভোটারদের নাম প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদের রাখতে চান। কমিশন এদের কাটতে চায়। বিজেপি চায়, এদের নাম বাদ পড়ুক এবং ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি হোক। এদের নাম ভোটার তালিকায় আমরা থাকতে দেব না। বিজেপি এ রাজ্যের একমাত্র বিরোধী দল। আমরা কারও বি-টিম, সি-টিম নই।’’
দিল্লিতে বাঙালি মহিলা এবং শিশুর উপরে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তুলে যে ভিডিয়ো মুখ্যমন্ত্রী পোস্ট করেছিলেন, সে প্রসঙ্গে সোমবার দিল্লি পুলিশের করা সাংবাদিক বৈঠকের কথাও মঙ্গলবার টেনে এনেছেন শুভেন্দু। পুলিশি অত্যাচারের ভুয়ো কাহিনি তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রী গুজব রটিয়েছেন বলে শুভেন্দু মন্তব্য করেন। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছেন। তিনি গুজব রটানোয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেতে পারেন।’’ মমতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে দিল্লি পুলিশকে তিনি অনুরোধ করছেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে মন্তব্য করেন শুভেন্দু। দিল্লিবাসী বাঙালিদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, মমতার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার জন্য। তবে অভিযোগ জানানোর প্রশ্নে তিনি যে অন্য কারও জন্য অপেক্ষা করবেন না, সে কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁর ভাই তথা কাঁথির সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীকে তিনি ফোনে বলেছেন অভিযোগ দায়ের করার জন্য। সংসদ অধিবেশনের মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে থানায় গিয়ে মমতার বিরুদ্ধে সৌমেন্দু অভিযোগ দায়ের করবেন বলে শুভেন্দু জানিয়েছেন।