BAR

চাকরির টোপে এনে সোজা ডান্স বারে, হাওড়ায় উদ্ধার ৫৫ তরুণী

স্থানীয় এক যুবকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় একটি চাকরির এজেন্সির সঙ্গে। তার মাধ্যমেই হোটেলে হাউস কিপিংয়ের কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে প্রায় এক বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন এক পঞ্জাবি তরুণী। তার পর...

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ১৫:২৯
Share:

পানশালা থেকে উদ্ধার হওয়া তরুণীরা। —নিজস্ব চিত্র।

পঞ্জাবের জলন্ধর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে বাড়ি। নিম্নবিত্ত পরিবার। স্থানীয় এক যুবকের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় একটি চাকরির এজেন্সির সঙ্গে। সেই এজেন্সির মাধ্যমেই হোটেলে হাউস কিপিংয়ের কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে প্রায় এক বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন এক পঞ্জাবি তরুণী। এজেন্সির লোক মারফৎ তিনি পৌঁছন তপসিয়া এলাকার একটি হোটেলে।

Advertisement

কিন্তু সেখানে তাঁকে বলা হয়, হাউস কিপিং নয়, কাজটা আসলে বারে নাচ করার। প্রথমে তিনি রাজি হননি। কিন্তু তাঁর পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে সমস্ত নথি তখন সেই এজেন্সির কব্জায়। ওই হোটেলেই তাঁকে আটকে রাখা হয় তিন দিন।

সম্পূর্ণ অজানা একটি শহরে তখন সেই এজেন্সির কথা মতো না চলে উপায় ছিল না তাঁর। বাধ্য হয়েই তখন ডান্স বারে নাচতে রাজি হতে হয় ওই তরুণীকে। রাজি হওয়ার পর তাঁকে অন্য মেয়েদের সঙ্গে পার্ক সার্কাস এলাকার একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়। সেখানেই চলে প্রাথমিক নাচের প্রশিক্ষণ।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া শ্রমিকদের তথ্য রাখবে প্রশাসন

এ রকম ভাবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা ৫৫ জন তরুণীকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে এবং হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার চারটি ডান্স বারে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে হাওড়া কমিশনারেটের পুলিশ। উদ্ধার হওয়া তরুণীদের মধ্যে নেপালেরও তিন জন রয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই সব পানশালার ম্যানেজার, কর্মী-সহ মোট ১১ জনকে। শুধু পানশালাতে নাচতে বাধ্য করা নয়, অভিযোগ, ওই তরুণীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পানশালাগুলিতে ফ্লোর ভাড়া নেয় এক শ্রেণির ব্যাবসায়ী। তাদের পোশাকি নাম ব্যান্ড লিডার। সেই ব্যান্ড লিডারদের দলেই থাকেন এই তরুণীরা। পানশালা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যান্ড লিডারের চুক্তি খুব পরিষ্কার। ব্যান্ড লিডার প্রতি রাতের হিসাবে পানশালা কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেবেন। কিন্তু, ব্যান্ড লিডারের আয় কোথা থেকে হয়? তরুণীদের নাচ-গানের সময় পানশালার খদ্দেররা প্রচুর পরিমান নগদ টাকা দেন। সেই টাকা ভাগাভাগি হয় ব্যান্ডলিডার এবং তরুণীদের মধ্যে।

আরও পড়ুন: দ্রুত ফিরুক প্রিয়জন, চায় পরিবার

হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এই হোটেলের বেসমেন্টের পানশালা থেকে উদ্ধার ২৮ তরুণী।

পঞ্জাবের ওই তরুণীর মতোই চাকরির খোঁজ করতে গিয়ে দালালদের খপ্পরে পড়েন নেপালের বাসিন্দা সিমরন (নাম পরিবর্তিত)। তাঁকেও প্রথমে কল সেন্টারে কাজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার পর বাধ্য করা হয় পানশালাতে নাচতে। তাঁর অভিজ্ঞতা আরও ভয়ানক। ওই তরুণী এক সময়ে দমদমে যশোহর রোডের ধারে বার মাফিয়া জগজিৎ সিংহর একটি পানশালায় কাজ করতেন। সেখানে একাধিক বার তাঁর ওপর যৌন নির্যাতনও চালানো হয় বলে অভিযোগ। রাজি না হলে মারধরও করা হত।

ওই তরুণীরা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, বহু ক্ষেত্রেই ব্যান্ড লিডাররা খদ্দেরদের সঙ্গে এই তরুণীদের বাইরে সময় কাটাতে পাঠায়। তাতে দু’পক্ষেরই অতিরিক্ত রোজগার। সাধারণ ভাবে, কোনও তরুণীর নাচের সময় খদ্দেররা যে টাকা দেন, পানশালার ভাষায় যাকে ‘কালেকশন’ বলা হয়, তা ৬০-৪০ বা ৫০-৫০ অনুপাতে ব্যান্ড লিডার এবং সেই তরুণীর মধ্যে ভাগ হয়।

উদ্ধার হওয়া তরুণীদের একটা বড় অংশ আগে ভিআইপি রোডের ধারের বিভিন্ন পানশালায় কাজ করতেন। সেখানে পুলিশি হানা শুরু হওয়ার পর থেকে এঁরা ব্যান্ড লিডারদের মাধ্যমে ভিড় জমাতে শুরু করেন হাওড়ার জাইকা, টিউলিপ বা কলসের মতো বিভিন্ন পানশালাতে।

আরও পড়ুন: প্রিয়জনদের প্রতীক্ষায় প্রার্থনা পরিবারগুলিতে

হাওড়া পুলিশের তরফে হয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে মানুষ পাচার, যৌন লিপ্সা মেটানোর জন্য পাচারের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদেরকে জেরা করে মূল দালালদের পাকড়াও করতে আদালতে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া তরুণীদের সরকারি হোমে পাঠানোর আর্জি জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।

(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন