Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ফুরিয়েছে খাবার, নেই জল

দ্রুত ফিরুক প্রিয়জন, চায় পরিবার

পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমনই জনা দশেক যুবকের। যা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি-৩ ব্লকের পরিহরা গ্রামের। এঁদের সকলেই নির্মাণ কাজে এখন কেরালায়। টিভিতে কোচি, এর্নাকুলাম-সহ গোটা কেরালায় বন্যার ভয়ঙ্কর রূপ দেখে উদ্বেগে দিন কাটছে এঁদের পরিবারের।

ফোন আসেনি স্বামীর। চিন্তায় মাখন ভৌমিকের পরিবার।

ফোন আসেনি স্বামীর। চিন্তায় মাখন ভৌমিকের পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কাঁথি ও পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০১:০৬
Share: Save:

‘খাবার ফুরিয়ে গিয়েছে। খাওয়ার জল পাচ্ছি না। ফোনটাও চার্জ করতে না পারায় যোগাযোগও বন্ধ হওয়ার জোগাড়’। শুক্রবার রাতে বাড়িতে স্ত্রীকে ফোনে এটুকুই জানাতে পেরেছিলেন শ্রীমন্ত পাত্র। তারপর আর খবর নেই তাঁর।

শুধু শ্রীমন্ত নয়, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমনই জনা দশেক যুবকের। যা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি-৩ ব্লকের পরিহরা গ্রামের। এঁদের সকলেই নির্মাণ কাজে এখন কেরালায়। টিভিতে কোচি, এর্নাকুলাম-সহ গোটা কেরালায় বন্যার ভয়ঙ্কর রূপ দেখে উদ্বেগে দিন কাটছে এঁদের পরিবারের। তার উপর কারও সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে না পারায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। জালালখানবাড়ের বাসিন্দা জনৈক ঠিকাদার মাখন ভৌমিকের সঙ্গেই এঁরা গিয়েছেন। টিভিতে কেরলের বন্যার ছবি দেখে ঘুম নেই তাঁর স্ত্রী রেখাদেবীর। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর মোবাইল বন্ধ। অন্য একজনের মারফত ওঁর খবর পেয়েছি। খুব চিন্তা হচ্ছে। বাবার ফোন না আসায় মেয়েও কান্নাকাটি করছে।’’

শ্রীমন্তের মাসির ছেলে তপন মান্না জানান, ভাই কেরালার আলুভায় গিয়েছিল নির্মাণকর্মী হিসেবে কাজ করতে। কোনওমতে একবার যোগাযোগ হয়েছিল। তাতে বাড়ি ফিরতে চেয়ে কান্নাকাটি করছে। উদ্বেগের একই ছবি কার্তিক মণ্ডলের পরিবারেও। বাবা অধর মণ্ডলের কথায়, ‘‘শেষ বার কথার সময় ছেলে বলেছিল মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে। একটা উঁচু বাড়ির ছাদে সেনাকর্মীরা উদ্ধার করে এনে রেখেছে। আর কিছু জানতে পারিনি।’’

মারিশদা গ্রামের শিবশঙ্কর দোলই কোচি গিয়েছিলেন কাজে। বন্যার পর থেকে খোঁজ নেই তাঁরও। স্ত্রী কবিতা দেবী বলেন, ‘‘পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষ। পাঁচ মাস আগে গিয়েছিল। বন্যা শুরু হওয়ার পর আর ফোন আসেনি। বাধ্য হয়ে বিডিওর দফতরে গিয়ে ওকে দ্রুত বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’

কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশচন্দ্র বেজ বলেন, ‘‘কেরালায় কাজ করতে গিয়ে যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে ঘরের লোককে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রচুর আবেদন পেয়েছি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দ্রুত তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’

কেরলে কাজে গিয়ে আটকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে কাঁথির দেশপ্রাণ এবং মারিশদায়। ওই দুই এলাকায় ৬ জন এর্নাকুলাম জেলার বেন্ডালা এলাকায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাঁদেরই একজন খোকন শীটের স্ত্রী দময়ন্তী দেবী বলেন, ‘‘অনেক বার চেষ্টার পর আজ দুপুরে স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। ওঁরা কয়েকজন একটা চারতলা বাড়ির উপরে রয়েছেন। কলার ভেলায় চেপে অনেক দূর থেকে খাবার ও জল আনতে হচ্ছে। কবে বাড়ি ফিরবে কিছুই জানাতে পারেনি। এখন একটাই প্রার্থনা, ওরা যেন সুস্থ থাকে।’’ ওই সব পরিবারের তরফে বিডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দেশপ্রাণের বিডিও মনোজ মল্লিক জানান, কেরলে যাওয়া ওই যুবকদের পরিবার লিখিত ভাবে সব জানিয়েছেন। প্রশাসনিক স্তরে সাহায্যের চেষ্টা করা হচ্ছে। দারিয়াপুরের দুজন এবং চালতি গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন কেরলে আটকে পড়েছেন বলে খবর এসেছে। ওঁদের ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে।

ঘরের লোকের জন্য চোখের ঘুম ছুটেছে পাঁশকুড়া থানার সুকুতিয়া এলাকার ১২টি পরিবারের। এঁদের ঘরের লোক কাজে গিয়েছেন কেরলের কোট্টেম এলাকায়। তাঁদের একজন সামসুদ্দিনের সঙ্গে দু’দিন আগে শেষ কথা হয়েছিল পরিবারের। জানা গিয়েছে, তাঁরা সকলেই একটি বাড়িতে আটকে আছেন। খাওয়ার জল, বিদ্যুৎ কিছুই নেই। কুরবানি ইদের জন্য সবারই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফোনে এ খবর পাওয়ার পর থেকে সকলেই মুষড়ে পড়েছেন। সকলের একটাই প্রার্থনা, ওঁদের যেন কোনও বিপদ না হয়। পাঁশকুড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি লিপিকা জানা হাজরা বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি জানার পর থেকেই উদ্বেগে রয়েছি। প্রয়োজনে ওই পরিবারগুলিকে যথাসাধ্য সাহায্য করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala Floods Kerala Family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE