Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া শ্রমিকদের তথ্য রাখবে প্রশাসন

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করানো হবে। শ্রমিকদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরের পাশাপাশি কোন রাজ্যের কোথায়, কী কাজে যাচ্ছেন, কার সঙ্গে যাচ্ছেন—সব তথ্য সংগ্রহ করা  হবে।

শরীরে আর এক ফোঁটা শক্তি অবশিষ্ট নেই। হাওড়া স্টেশনে নেমেই ঘুমে লুটিয়ে পড়লেন ওঁরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

শরীরে আর এক ফোঁটা শক্তি অবশিষ্ট নেই। হাওড়া স্টেশনে নেমেই ঘুমে লুটিয়ে পড়লেন ওঁরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০২:১১
Share: Save:

প্রশ্নটা উঠছিল অনেক দিন থেকেই। এ বার উদ্যোগী হল মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। ধাক্কাটা দিল অবশ্য বানভাসি কেরল!

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করানো হবে। শ্রমিকদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরের পাশাপাশি কোন রাজ্যের কোথায়, কী কাজে যাচ্ছেন, কার সঙ্গে যাচ্ছেন—সব তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, “আগে আমরা বিড়ি শ্রমিকদের উপরে সমীক্ষা চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। এ বারে ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের বিষয়ে সমীক্ষা চালানো হবে। তাঁদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।”

যা শুনে কেরল ফেরত ডোমকলের মজিবর রহমান বলছেন, “প্রশাসনকে জানানোর নিয়ম নেই বলেই কেরলে কাজে যাওয়ার সময় জানাইনি। নিয়ম থাকলে জানিয়েই যেতাম। এ বারে প্রশাসন যে উদ্যোগ নিচ্ছে তা খুব ভাল। আমরাও সব জানিয়েই যাব।”

প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন মজিবরের মত ভিন রাজ্যে কর্মরত অন্য শ্রমিকরাও। কাজের টানে নবাবের জেলা থেকে বহু লোক ভিন রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও যান। কিন্তু কোন এলাকার, কত লোক, কোথায়, কী কাজে যাচ্ছেন তার কোনও খোঁজ থাকে না। কত জন ভিন রাজ্যে বা ভিন দেশে কাজে গিয়েছেন, প্রশ্ন করলে সদুত্তরও মেলে না প্রশাসনের কাছে।

কিন্তু যখনই সমস্যা শুরু হয় তখনই হইচই শুরু হয়। অসহায় বাড়ির লোকজনও ভিড় করেন প্রশাসনের দুয়ারে। কেরল-কাণ্ডেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সত্যি কথা বলতে আমরাও অসহায় বোধ করি। কারণ, শ্রমিকেরা কোথায় থাকেন, কী কাজ করেন কিছুই আমরা জানি না। এ বারে সেই সমস্যা মিটবে।’’

তবে কেরলে বন্যার পরে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল নবাবের জেলা। কারণ, এ জেলার বহু শ্রমিক কেরলে কাজে গিয়েছিলেন। তবে অল্প সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসন কেরলে কর্মরত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিকের তালিকা তৈরি করেছে। বিডিওদের নিয়ে কমিটি গড়ে মাত্র তিন দিনে সেই শ্রমিকদের নাম, ফোন নম্বর, কেরল ও মুর্শিদাবাদের তাঁদের ঠিকানা-সহ তালিকা তৈরি করেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বানভাসি কেরলে আটকে থাকা শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। রবিবার পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ৫ হাজার শ্রমিকের তালিকা রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সোমবার বিভিন্ন ব্লক থেকে যে তথ্য আসছে তাতে আরও ৫০০ লোকের নাম পাওয়া গিয়েছে। সেই তালিকা তৈরি হলেই রাজ্যে পাঠানো হবে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রতিটি ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে কেরল থেকে মুর্শিদাবাদের লোকজন ঘরে ফিরতেও শুরু করেছেন। কেরল থেকে ফেরা লোকজনের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও। চিকিৎসকরা যাতে নিয়মিত হাসপাতালে আসেন, তা-ও বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, এমনিতেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে জেলা জুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন। কেরল ফেরত লোকজন মুর্শিদাবাদে ফিরে জ্বর বা অন্য কোনে রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কি না সে দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত ওষুধ রাখতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE