সাত মাস অসুস্থ ছিলেন তিনি। ভাঙা রান্নাঘরের এক পাশে শুয়ে দিন কাটত। কোনও দিন পেট ভরে খাওয়া জুটত। কোনও দিন আবার কাটতো আধপেটা খেয়েই থাকতে হত। শুক্রবার সকালে মৃত্যু হল মেখলিগঞ্জের সাবেক ছিটমহল জোতনিজ্জামার বাসিন্দা সেই বৃদ্ধার।
পরিবার সূত্রের খবর, চোখের রোগে ভুগছিলেন ষড়বালা বর্মন (৭০)। অভিযোগ, তেমন কোনও চিকিৎসা পাননি তিনি। এমনকী, সরকারি সুযোগ-সুবিধেও তেমন মেলেনি। মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ সৎকারের জন্য গ্রামবাসীরা চাঁদা দেন। ওই ঘটনায় সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে। মেখলিগঞ্জের বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান বলেন, “গরিব মানুষের সাহায্যের সরকারের একাধিক প্রকল্প রয়েছে। দেহ সৎকার করার জন্যেও টাকা দিচ্ছে সরকার। ওই পরিবারের বিষয়ে খোঁজ নেব।”
বাসিন্দারা জানান, ওই বৃদ্ধার তিন মেয়ে। তিনজনেরই বিয়ে হয়েছে। এক মেয়ে লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গেই তিনি থাকতেন। নিজের জায়গায় বলতে সামান্য ভিটেমাটি। একটি বাঁশঝাড় ছিল। চিকিৎসার খরচ চালাতে সেটিও বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁরা। লক্ষ্মীদেবীর দুই ছেলের একজন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। বড় ছেলে অভাবের সংসারে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা ছেড়ে দিনমজুর হয়েছেন। লক্ষ্মীদেবী বলেন, “চা বাগানে কাজ করে রোজগার করি। একদিন কাজ না করতে পারলে পেটের ভাত জোগাড় নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। তার মধ্যে দিয়েই যতটুকু পারি করেছি। শেষ পর্যন্ত মাকে আর বাঁচাতে পারলাম না।” গ্রামের বাসিন্দা ধীরেন বর্মন, লাল্টু বর্মন বলেন, “দেড় বছর আগে লক্ষ্মীদেবীর বাবা মারা যাওয়ার সময় আমরা সবাই মিলে চাঁদা তুলে সৎকার করি। এ বার তাঁর মায়ের মৃত্যুর সময়েও সেটাই করা হয়েছে।”
মেখলিগঞ্জের বিডিও বীরূপাক্ষ মিত্র অবশ্য ওই মহিলাকে দীর্ঘদিন ধরেই চেনেন। তিনি জানান, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ওই বৃদ্ধাকে চাল, ডাল থেকে জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “কোনও অসুবিধে হলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল। এমনকী গ্রাম পঞ্চায়েতেও ওই বৃদ্ধার উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছিল। তার পরে কী হয়েছে তা খোঁজ নেব।” সেই সঙ্গে তিনি জানান, সরকারি প্রকল্পে ওই গ্রামে রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলি নিয়ে প্রচারও চালানো হয়েছে।