শৌচকর্মে বাইরে গিয়ে সর্পদষ্ট, মৃত বধূ

গোটা জেলা জুড়ে নির্মল মিশন কর্মসূচি নিয়ে যখন জোরদার প্রচার চলছে, ঠিক সেই সময় খোলা মাঠে শৌচকর্ম করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক মহিলার৷ মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ির দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০১:৫৭
Share:

গোটা জেলা জুড়ে নির্মল মিশন কর্মসূচি নিয়ে যখন জোরদার প্রচার চলছে, ঠিক সেই সময় খোলা মাঠে শৌচকর্ম করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক মহিলার৷ মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ির দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে৷ এই ঘটনায় নির্মল জেলা গড়ার ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷

Advertisement

প্রশ্ন ওঠার যথেষ্ট কারণও রয়েছে৷

জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে অবস্থিত দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতটি৷ খোদ পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে শতকরা ৭৫ ভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই৷ বছর খানেক আগে এক-দেড় হাজার পরিবার শৌচাগারের জন্য অর্থ জমা করলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও তা হয়নি৷ যার জেরে শৌচকর্মের জন্য ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ মানুষেরই ভরসা খোলা মাঠ৷ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই বাসিন্দা জরিনা খাতুন বেগমের ক্ষেত্রেও ভরসা তাই৷

Advertisement

জানা গিয়েছে, জরিনা খাতুন বেগমের বাড়ি দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানিকগঞ্জের শালবাড়ি এলাকায়৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু ওই গৃহবধূর বাড়িতেই নয়, গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মতোই শালবাড়িতেও বেশিরভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই৷ ওই গৃহবধূর আত্মীয় রাজ্জাকুল হক বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় ২৫-৩০টা বাড়ি রয়েছে৷ যার মধ্যে খুব বেশি হলে দশ-বারোটা বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে৷ বাকিদের ভরসা খোলা মাঠই৷’’

এমনই এক পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ খোলা মাঠে গিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ৷ সেখানেই তিনি সর্পদষ্ট হন। বাড়ির লোকেরা তড়িঘড়ি তাঁকে এক ওঝার কাছে নিয়ে যান৷ কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়৷ পরে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে৷ সেখানে এ দিন তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত হয়৷

স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রীতা পাহাড়ি বলেন, ‘‘এলাকার ৭৫ ভাগ বাড়িতেই শৌচাগার নেই৷ টাকা জমা দেওয়ার পরও বছর খানেক ধরে এক-দেড়হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হচ্ছে না৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই মানুষগুলির ভরসা তো খোলা মাঠই হবে৷’’ কিন্তু কেন বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার হচ্ছে না? প্রধানের কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বিডিও-কে বারবার বলেছি৷ যে ঠিকাদার কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁকেও বহুবার বলা হয়েছে৷ কিন্তু কাজ হচ্ছে না৷’’ শুধু তাই নয়, স্থানীয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি নৃপতিভূষণ রায়ের অভিযোগ, নির্মল গ্রাম নিয়ে এলাকায় প্রচারও খুব একটা হয় না৷

জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও তাপসী সাহা বলেন, ‘‘শৌচকর্ম করতে গিয়ে সাপের কামড়ে মহিলার মৃত্যু খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ ওই গ্রামে শৌচাগার তৈরির কাজ কেন আটকে রয়েছে, তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না৷ তবে দ্রুত যাতে বাড়ি বাড়ি তা তৈরি হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’ জেলাশাসক রচনা ভকতও বলেন, ‘‘ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যাতে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার গড়ে ওঠে এবং মানুষ তা ব্যবহার করেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন