প্রতীকী ছবি।
পিরের দরগায় মোমবাতি জ্বালাতে গেলে মন্দিরে প্রণাম করে আসেন আরশাদ। আবার দুলাল যখন মন্দিরে পুজো দিতে যান, নিয়ম করে মোমবাতি জ্বালিয়ে আসেন পিরের দরগায়। দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে এমনটাই। পিরের দরগার গায়ে গা লাগিয়েই যে দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ানহাটের কালী মন্দির। চারপাশে হানাহানির খবরে তাই মনখারাপ দেওয়ানহাটের।
বাসিন্দারা বলছেন, কখনও তো কোনও বিরোধ হয়নি, উল্টে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ হাতে হাত মিলিয়ে বারবার মন্দির-মসজিদ সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন। এমনই তো সংস্কৃতি। এ ভাবেই তো কয়েকশো বছর ধরে পাশাপাশি রয়েছেন সকলে।
দেওয়ানহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দুলাল চন্দ ওই মন্দির কমিটির সদস্য। তিনি জানান, প্রায় একশো বছরের পুরনো ওই মন্দির এবং দরগা। প্রতিবছর এখানে পুজো হয়। কীর্তনের আসর বসে। দরগাতেও নিয়মিত মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা হয়। তাঁর কথায়, “আমরা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গেই তো সব অনুষ্ঠান করি। কই কখনও তো বিরোধ হয়নি। আর দুই জায়গাতেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ভিড় করে।” তাঁর সঙ্গে একমত ওই এলাকার বাসিন্দা আরশাদ হোসেন। তিনি দরগা কমিটিতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা এক সঙ্গে যুগ যুগ ধরে আছি। মন্দির-দরগা আছে। কেউ কাউকে কখনও কেউ অবহেলা করিনি। এখন চারদিকে যে লড়াইয়ের খবর শুনি, মন খারাপ হয়।”
কোচবিহার থেকে দিনহাটা যাওয়ার পথে দেওয়ানহাট। গ্রাম পঞ্চায়েত হলেও এখন নগরায়নের ছোঁয়া লেগেছে। রাস্তার পাশেই মন্দির ও দরগা। আশেপাশে বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। খানিক দূরে মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। বাসিন্দারা জানান, ওই মন্দির ও পিরের দরগা বহু বছরের পুরনো এটা তাঁরা জানেন। কিন্তু কীভাবে তা গড়ে উঠেছে তা নিয়ে সঠিক কেউ কিছু বলতে পারেননি। দরগা কমিটির সভাপতি হাসমত আলি জানান, শতাধিক বছরের পুরনো ওই ধর্মীয় স্থান।
বছরে একবার দরগায় অনুষ্ঠান হয়। মন্দিরেও পুজো হয়। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ভিড় করেন। তিনি বলেন, “এখানে আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। পির বাবার অনুষ্ঠানের জন্য যখন টেবিল পেতে বসি, মুসলমানদের সঙ্গে হিন্দুরাও হাজার হাজার টাকা দিয়ে যায়।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “চারদিকের হানাহানি কষ্ট দেয়। আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম।
আমরা সমস্ত ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। সব জায়গায় যাই প্রার্থনার জন্য। কেন সবাই বোঝে না?”