মমতার নির্দেশে স্বস্তিতে কর্তারা

কাঠ পাচার, বন্যপ্রাণী হত্যায় অভিযুক্তদের আড়াল করতে জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু সম্প্রতি পরিস্থিতির চাপে এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে নবান্নের দ্বারস্থ হন বন আধিকারিকরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

• পাচার: উত্তরবঙ্গে মাঝেমধ্যেই উদ্ধার হয় রক্তচন্দন। ফাইল চিত্র।

কাঠ পাচার, বন্যপ্রাণী হত্যায় অভিযুক্তদের আড়াল করতে জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু সম্প্রতি পরিস্থিতির চাপে এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে নবান্নের দ্বারস্থ হন বন আধিকারিকরা। শেষ পর্যন্ত খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন-রক্ষার ব্যাপারে কঠোর বার্তা দেওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তাঁরা।

Advertisement

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন তো বলেই দিলেন, ‘‘আমি তো সোমবার বিভাগীয় অনুষ্ঠানে খোলাখুলি সব বলেছি। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বনরক্ষার ব্যাপারে কঠোরতম পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। নেতা-জনপ্রতিনিধি সুপারিশ করলেও বন সংক্রান্ত অপরাধে যুক্ত কাউকে ছাড়া যাবে না। কেউ অনুরোধ করলে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ আনতে হবে।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, কোচবিহারের একাধিক নেতার সঙ্গেও কাঠ পাচারকারীদের যোগাযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগেই কোচবিহারে কয়েক দফায় বহু লক্ষ টাকার কাঠ উদ্ধার হয়। সেই সময় ধৃতরা তৃণমূলের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের লোক বলে বন দফতরের আধিকারিকদের উপর চাপ তৈরি করে। দিনহাটার বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বছর খানের আগে প্রচুর চন্দন কাঠ উদ্ধার করেছিল বিএসএফ। কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির বিরুদ্ধে চন্দন কাঠ পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অনন্ত রায় বলেন, “রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের কাঠের চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তা মন্ত্রীর কথাতেই পরিষ্কার। এ রকম বহু সুপারিশ অনেক নেতাই করেন বলে আমাদের কাছেও খবর রয়েছে।”

Advertisement

বনরক্ষায় বার্তা

• ফোনে কাজ হল না। জলপাইগুড়ির বিট অফিসে হামলা। কাঠ পাচারকারীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।

• বাম আমলে এমন হতো। বদলায়নি তৃণমূলের জমানাতেও। আলিপুরদুয়ারে কাঠচোরদের ছাড়াতে থানায় ফোন করে হুমকি জনপ্রতিনিধিদের।

• কাঠচোরদের দাপটে উদ্বিগ্ন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সতর্ক হওয়ার বার্তা বনমন্ত্রীকে।

পাশাপাশি করাত কলের লাইন্সেস পেতেও কয়েকজন জেলা পর্যায়ের নেতার সুপারিশ গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রী অবশ্য পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কিছু বলতে নারাজ। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক অমল সিংহ বলেন, “গত তিরিশ বছরের ইতিহাসে কোনও মন্ত্রী এমন ঘোষণা করেননি। মন্ত্রীর বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করছি।”

তবে বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি জানান, অনেক সময় বনবস্তির বাসিন্দাদের সামান্য কারণে আটকে দেন বনকর্মীরা। অনেকের সাইকেল কেড়ে নেওয়া হয়। সেই ব্যাপারে তাঁরা বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তা আমরাও চাই। কিন্তু দু-চারটে জ্বালানি কাঠ নিয়ে যাওয়ার কারণে বনবস্তির বাসিন্দাদের আটকে দেওয়া বা সাইকেল কেড়ে নেওয়া ঠিক নয়। সে বিষয়ে আমরা অনেক সময়ই বলি।”

আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, ‘‘কাঠচোরদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে তা বন্ধ হলে ভাল হয়।’’ কোচবিহারের পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “এমনটাই হওয়া দরকার। বন বাঁচাতে কোথাও সুপারিশ মানা যাবে না। তা হলে সবুজ নষ্ট বন্ধ হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন