NIA

তদন্তে এনআইএ

ধৃতদের মধ্যে একজন যে জালনোট কাণ্ডে চাঁই তা জানার পরেই আসরে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। ওই ধৃতের নাম শাহনওয়াজ আনসারি ওরফে বান্টি।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫০
Share:

নিজস্ব চিত্র।

অপহরণ বা লুটের ছক কষে ধরা পড়েছিল প্রথমে। জেরা শুরু করতেই বেরিয়ে আসে আসল পরিচয়। ধৃতদের মধ্যে একজন যে জালনোট কাণ্ডে চাঁই তা জানার পরেই আসরে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। ওই ধৃতের নাম শাহনওয়াজ আনসারি ওরফে বান্টি। মাত্র ২২ বছর বয়সে দেশের জালনোট চক্রের অন্যতম চাঁই হয়ে ওঠা শাহনওয়াজের যোগসূত্র বাংলাদেশ, নেপাল হয়ে দুবাই অবধি পৌঁছেছে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। শুধু জালনোট বা অস্ত্রের কারবার নাকি সন্ত্রাস বা নাশকতায় জড়িয়েছে অভিযুক্তের হাত, সেটা জানতেই তাকে হেফাজতে নিতে চলেছে এনআইএ।

Advertisement

গত মার্চ থেকে উত্তরবঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে একের পর এক ধরপাকড় শুরু করেছেন এনআইএ অফিসারেরা। বিহার, মালদহ, শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে চলছে তদন্ত। এরই মধ্যে রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের খবরের ভিত্তিতে ফুলবাড়ির এশিয়ান হাইওয়ের পাশে একটি ধাবা থেকে পাঁচ জন ধরা পড়ে। সেই দলেই ছিল শাহনওয়াজ। শিলিগুড়ি পুলিশ সূত্রের খবর, খালপাড়ার পাইকারি বাজার এলাকার এক বড় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা বা তাঁর টাকা লুট করার ছক কষেছিল ওই দলটি। তার জন্য শিলিগুড়িতে ঢুকে সঙ্গীদের নিয়ে ধরা পড়ে শাহনওয়াজ। সকলকে প্রথমে বিহারের দুষ্কৃতী ধরেই জেরা শুরু হয়। তাতেই বেরিয়ে আসে আসল পরিচয়।

কেন্দ্র এবং রাজ্য গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাঁচ বছর আগে নাবালক অবস্থায় বিহার থেকে বেঙ্গালুরুতে কাজে গিয়েছিল শাহনওয়াজ। প্রথমে বিদ্যুৎমিস্ত্রির সহযোগী, পরে নিজেই মিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে সে। সেখানেই পরিচয় হয় দুই ভাই শেখ নুর উল্লা এবং শেখ আতাউল্লার সঙ্গে। ওই দু’জন রংমিস্ত্রির কাজ করত। অভিযোগ, মালদহ, মুর্শিদাবাদ থেকে জালনোট দেশের রাজধানীতে পৌঁছে দিত দলটি। একবার দিল্লির ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে ধরা পড়ে শাহনওয়াজ। ছাড়া পেয়ে সে কখনও উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে, কখনও মালহের কালিয়াচক, কখনও বিহারের চম্পারণ জেলায় ঘাঁটি গেড়ে জালনোটের ব্যবসা চালাচ্ছিল।
এনআইএ অফিসারেরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ বা নেপাল সীমান্ত থেকে এদেশে ঢোকা জালনোটের অন্তত ৫০ শতাংশ একটা সময় অবধি শাহনওয়াজ দেখভাল করত। মোট জালনোটের ৩০-৪০ শতাংশ দাম মিটিয়ে তা সীমান্তে ডেলিভারি নেওয়া হত। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হত। গত এক বছরে উত্তরপ্রদেশ এটিএস এবং দিল্লির ক্রাইম ব্রাঞ্চের ঠেলায় বিহারেই ঘোরাফেরা করছিল শাহনওয়াজ। পশ্চিমবঙ্গের স্পেশাল টাস্কফোর্সও মালদহ সীমান্তে তার গতিবিধি জানতে পেরে নজর রাখছিল।

Advertisement

জালে নোটচক্রের চাঁই

• শাহনওয়াজ আনসারি ওরফে বান্টি
• বাড়ি: বেতিয়া, বিহার
• বয়স: ২২ বছর
• অপরাধ: দেশের অন্যতম জালনোট চক্রের চাঁই
• যোগাযোগ: বাংলাদেশ, দুবাই ও নেপাল
• সক্রিয়তা: মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বিহার লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্ত
• জালনোটের ব্যবসা: দিল্লি, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটক, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ
• ঘাঁটি: বিহারের বেতিয়া, মালদহের কালিয়াচক, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, কর্নাটকের বেঙ্গালুরু
• ওয়ান্টেড: এনআইএ, বিহার পুলিশ, উত্তরপ্রদেশ এটিএস, দিল্লি ক্রাইম ব্রাঞ্চ, পশ্চিমবঙ্গের টাস্ক ফোর্স
• গ্রেফতার: ২০১৫ সালে দিল্লিতে এক বার। এবার শিলিগুড়িতে

গ্রেফতারের সময় মোটরবাইক, আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও ধৃতের কাছ থেকে ২২টি জালনোট, সাতটি মোবাইল ফোন এবং একটি ইন্টারনেট ডঙ্গল মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে শাহনওয়াজের সঙ্গে দুবাইয়ের কিছু যোগাযোগ মিলছে বলে তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন। তা খতিয়ে দেখতে ফোনের তথ্য যাচাই চলছে। ফুলবাড়ির পাশেই বাংলাদেশ সীমান্ত। সেখানেও কোনও পরিকল্পনা হচ্ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূ্ত্রে খবর, জলপাইগুড়ির ফাটাপুকুরের এক যুবকের মাধ্যমে শিলিগুড়ির ওই ব্যবসায়ীর খোঁজ মেলে। সেই টাকা লুট করে বিহার বা উত্তরপ্রদেশ পালিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে জালনোট আনার পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন