বৃদ্ধের নালিশে নাজেহাল ছেলে

প্রায় ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধের একা থাকার জেদকে, অভিযোগকে ঘিরে বিপাকে পড়লেন তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ। শুক্রবার দুপুরে লেকটাউন এলাকার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ এনজেপি থানায় গিয়ে ছেলে ও বৌমার নামে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন ও খেতে দেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০২:১২
Share:

ক্ষুব্ধ: বাবা কালাচাঁদ সাহা। নিজস্ব চিত্র

প্রায় ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধের একা থাকার জেদকে, অভিযোগকে ঘিরে বিপাকে পড়লেন তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে লেকটাউন এলাকার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ এনজেপি থানায় গিয়ে ছেলে ও বৌমার নামে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন ও খেতে দেন না।

পুলিশ এই ঘটনায় তদন্তে নামতেই পাড়া প্রতিবেশীরাও জড়ো হতে থাকেন। সেই সময় নিজেই আবার অভিযোগ প্রত্যাহার করার জেদ ধরে বসেন বৃদ্ধ। ভুল বোঝাবুঝির জেরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে তিনি ছেলে ও পুত্রবধূর দরাজ প্রশংসাও করেন। পুলিশ অফিসারেরা শেষ পর্যন্ত পরিবারটিকে থানায় গিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি মিটমাট করার পরামর্শ দিয়ে হাঁফ ছাড়েন।

Advertisement

কয়েক জন পুলিশ অফিসার জানান, ওই বৃদ্ধ প্রথমে থানায় গিয়ে যে ভাবে কথাবার্তা বলছিলেন তা সত্যিই চিন্তার। না খেয়ে থাকা, বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার কথাও বলেন। ওঁর অভিযোগ নিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে টোটো করে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে তদন্ত শুরু হয়। দুই দফায় লেকটাউনের আবাসনে পুলিশ অফিসারেরা যান। কিন্তু তদন্তেই অন্য ঘটনা উঠে আসে। পরিবারটির প্রতিবেশীরাই পুলিশকে জানান, কোনও গোলমাল নেই। বৃদ্ধ প্রচণ্ড জেদি। নিজের মর্জিমাফিক কাজ না হলে ক্ষেপে যান।

বৃদ্ধের নাম কালাচাঁদ সাহা। এক সময় তিনি কোচবিহারে একটি হোটেলে ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানকার পোস্ট অফিস পাড়ায় তাঁদের বাড়িও রয়েছে। সেখানে বৃদ্ধের স্ত্রী গীতাদেবী একাই থাকেন। গীতাদেবী স্বাস্থ্য দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। কিন্তু কোনওদিনই কালাচাঁদবাবু সেখানে থাকার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। একমাত্র ছেলে কিরণবাবু চার্টাড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তাঁর স্ত্রী রিমা এবং ছয় বছরের ছেলে রয়েছে। এখন বৃদ্ধ ছেলের কাছেই থাকেন। কিরণবাবু বলেন, ‘‘বাবা মা’র সঙ্গে থাকতে চায় না। কারও কাছে যায় না। ছেলের স্কুল ছুটি থাকায় কয়েকদিন ঘুরতে যাব ভাবি। বাবা বলেছিলেন, একা একা থাকবেন। কী খাবেন, কী করবেন ভেবে এক আত্মীয়ের বাড়িতে কয়েকদিন যেতে বলি। রাগ করে, না খেয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ করে বসে।’’

কিরণের স্ত্রী রিমা বলেন, ‘‘আমাদের কোনও সমস্যা নেই। প্রয়োজনে অন্য কোথাও সাময়িক ভাবে যেতে বললেই মাথা গোলমাল হয়ে যায়। চিৎকার চেঁচামেচি করেন। এই বয়সে একা তো ওঁকে ফ্ল্যাটে রাখা যায় না। কিন্তু কিছু বললেই রেগে যান।’’

বিকেলে ঘরে বসে কালাচাঁদবাবু শেষে বলেন, ‘‘এমন হবে বুঝিনি। পুলিশ তো বাড়ি এসে গিয়েছে। ছেলে, বৌমার সঙ্গে মীমাংসা করে নেব। আপনাদের চিন্তা করতে হবে না। নাতি এদিনই প্রথম শ্রেণিতে উঠেছে। তাই নিয়ে এখন ভাবছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন