গরমে বিভ্রাট, ক্ষোভে তাতল চাঁচল

লাগাতার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে মালদহের চাঁচল মহকুমা জুড়েই বাসিন্দাদের বিক্ষোভ অব্যাহত। শুক্রবারও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। তারপরে ১০ ঘন্টা ধরে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বাসিন্দাদের বিক্ষোভে তেতে ওঠে হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা এলাকা। গত সোমবার হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচলের কনুয়ায় ও পর দিন চাঁচলের মালতীপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের অভিযোগে হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটায় পথ অবরোধ। নিজস্ব চিত্র।

লাগাতার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে মালদহের চাঁচল মহকুমা জুড়েই বাসিন্দাদের বিক্ষোভ অব্যাহত। শুক্রবারও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। তারপরে ১০ ঘন্টা ধরে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বাসিন্দাদের বিক্ষোভে তেতে ওঠে হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা এলাকা। গত সোমবার হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচলের কনুয়ায় ও পর দিন চাঁচলের মালতীপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।

Advertisement

এ দিন তুলসিহাটায় একই অভিযোগে সকাল ন’টা থেকে চাঁচল-কুশিদাগামী রাজ্য সড়কের মস্তান মোড়ে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কোনও কর্তা এলাকায় না যাওয়ায় দফায় দফায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীরা না যাওয়ায় পুলিশও সেখানে যায়নি। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে উদ্ভূত সমস্যায় দফতরের কর্মী-আধিকারিকরা না গেলে যে তাঁরা যাবেন না, তা পুলিশের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। কেননা শুধু পুলিশ গেলে তাঁদেরই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলতে থাকায় কয়েকজন যাত্রী অবরোধ পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাঁদের মারধরও করা হয় বলে বিক্ষোভকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আট ঘন্টা ধরে অবরোধ চললেও বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার।

Advertisement

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মালদহের রিজিওনাল ম্যানেজার দিলীপকুমার বাছাড় বলেন, ‘‘আমাকে কেউ অবরোধের কথা জানায়নি।’’ তিনি বলেন, বোরোচাষের মরসুম চলছে। প্রচন্ড চাপ বেড়ে যাওয়ায় সর্বত্রই কমবেশি সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা যে হবে, তা আমাদের তরফে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোথাও সমস্যা হলে তা স্থানীয় আধিকারিকদের দেখতে হবে। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। ওখানে কেন এখনও কেউ যাননি, তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর আমাদের কর্মীরা না গেলে পুলিশ গিয়ে কী করবে, পুলিশের এই দাবিও অযৌক্তিক নয়।’’

চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে কোথাও সমস্যা হলে দফতরের কর্মীদের সঙ্গেই পুলিশ যাবে বলে থানাগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

বাসিন্দাদের অভিযোগ, বোরোচাষের মরসুম হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় প্রচন্ড চাপ বেড়ে গিয়ে সর্বত্রই কমবেশি সমস্যা তৈরি হয়েছে। তুলসিহাটা হরিশ্চন্দ্রপুরের অন্যতম ব্যবসা প্রধান এলাকা। বোরোচাষের পাশাপাশি এলাকায় অসংখ্য ছোট-বড় মিল, কারখানা রয়েছে। লো-ভোল্টেজের জন্য শ্যালো চালানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি ভোল্টেজ এতটাই ওঠানামা করছে যে, শ্যালো পাম্প-সহ বিভিন্ন কারখানার মোটর, যন্ত্রাংশ পু়ড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে তুলসিহাটা এলাকায় ওই সমস্যা চলছে। গরম পড়তেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে। সমস্যা মেটাতে তুলসিহাটায় একটি সাব স্টেশন তৈরি করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।

বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির অবশ্য দাবি, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা এড়াতে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য সমস্যায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। সামসি পাওয়ার স্টেশনে ৩১ এমভিএ ট্রান্সফর্মার পাল্টে সেখানে ৫০ এমভিএ ট্রান্সফর্মার বসানো হবে। আগামী ২২ মে তা করা হবে। তাহলে এলাকার লো-ভোল্টেজের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। আর তুলসিহাটায় অস্থায়ী সাব স্টেশনের কাজও যত শীঘ্র সম্ভব করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য বিনোদ কুমার গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘বৃহস্পতিবার আমার ইটভাঁটার মোটর পুড়ে গিয়েছে। ভোল্টেজ ওঠানামা করায় অনেক চাষিরই শ্যালোর মোটর পুড়ে গিয়েছে। গরমে বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠলেও দফতরের হেলদোল নেই।’’

স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ সাহা, মাসুদ আলম, বাবলু রামরা জানান, বিদ্যুতের বেহাল দশায় চাষি থেকে ব্যবসায়ী সবার মাথায় হাত পড়েছে। বাধ্য হয়েই আমাদের পথে নামতে হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন