টেন্ডার: সার্কিট বেঞ্চে। জলপাইগুড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের সদ্য শেষ হওয়া টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে দিল রাজ্য সরকার। পূর্ত দফতর জানিয়েছে, ফের নতুন করে আর একটি টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ভবনের নকশা জানিয়ে ঠিকাদার সংস্থার কাছে দর চাওয়া হয়েছিল। নতুন প্রক্রিয়ায় পূর্ত দফতরই ভবনের খুঁটিনাটি বিষয়ের দর বেঁধে দেবে। সেই দর মেনে কাজ করতে হবে ঠিকাদারি সংস্থাকে। নির্মাণ কাজে নানা সিন্ডিকেট চক্রের গেরোয় পড়ে প্রকল্পের খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যায়, কখনও আবার বরাদ্দ বেশি থাকলেও কম দামের সামগ্রী লাগিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা পকেটে পুরে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই সব প্রবণতা আটকাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবন তৈরিতে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য। মাস দু’য়েক আগে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়। যে সংস্থা ভবন নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে তার নামও জানানো হয়। পুজোর ঠিক আগে হঠাৎই পূর্ত দফতর নোট শিট তৈরি করে পুরোনো টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রকল্পের খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসে স্থায়ী ভবন তৈরির নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।
পূর্ত দফতরের নর্দার্ন জোনের প্রধান বাস্তুকার ভাস্কর ঘোষ বলেন, “আইটেমাইজড টেন্ডার হবে। যার অর্থ ভবনের খুঁটিনাটি দর হিসেব করে টেন্ডার করা হবে। একটি পেরেকের দামেরও হিসেব থাকবে। সেই দরেই নির্মাণ সংস্থাকে কাজ করতে হবে। আমাদের বাস্তুকারেরা দর যাচাই করে দেখছেন। পুরো হিসেব হয়ে গেলে কত টাকা প্রয়োজন তা জানা যাবে।”
পুরোনো প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকার আনুমানিক বরাদ্দ করেছিল। আদতে কতটা খরচ হচ্ছে, তা নির্ভর করত নকশা দেখে নির্মাণ সংস্থা কী দর জানাচ্ছে তার উপরে। পূর্ত দফতরের এক কর্তার কথায়, “ধরা যাক মেঝেতে মার্বেল বসানোর কথা রয়েছে, কিন্তু নির্মাণ সংস্থা ‘কোটা’ বসিয়ে দিয়েছে। ‘কোটা’র দাম কম। অর্থাৎ বরাদ্দ টাকা ঢুকে যাবে নির্মাণ সংস্থার পকেটে। উল্টোটাও হয়। অনর্থক দামি জিনিস বসিয়ে প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিটি নির্মাণ সামগ্রী কী ব্যবহৃত হবে এবং তার দর বেঁধে টেন্ডার হলে সে উপায় নেই।”
সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের দরজার ছিটকিনি থেকে কত ইট প্রয়োজন এবং সে ইটের দর কত করে সব বেঁধে দিচ্ছে পূর্ত দফতর। আপাতত স্থায়ী বেঞ্চের মূল ভবন, আনুষাঙ্গিক অফিস ঘর সহ ১৬ জন বিচারপতির আবাসন তৈরির টেন্ডার হতে চলেছে। হাইকোর্ট অনুমোদিত পুরোনো নকশা মেনেই কাজ হবে বলে জানানো হয়েছে।