নবদম্পতি: বিয়ের সাজে কৌশিক ও প্রিয়াঙ্কা। নিজস্ব চিত্র
মেয়ের বিয়ের জন্য বেসরকারি আর্থিক সংস্থায় টাকা জমিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারদুয়ার জেলার পটটোলা গ্রামের দিনমজুর কমল সূত্রধর। এক টাকাও ফেরত পাননি তিনি। এরপর জমি সংক্রান্ত মামলা লড়তে গিয়ে আর্থিক ভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। কী ভাবে মেয়ে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে দেবেন তা নিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন কমলবাবু এবং তাঁর স্ত্রী রিনা সুত্রধর।
জমি সংক্রান্ত মামলা লড়তে গিয়েই কৌশিক বনিক নামে আলিপুরদুয়ারের এক আইনজীবীর সাহায্য পান তাঁরা। পরিচয় ঘনিষ্ঠ হলে মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে তাঁদের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়ে উকিলবাবুর সাহায্য চান। এক জন ভাল পাত্র খুঁজে দেওয়ার আর্জি জানান তাঁরা। কিন্তু প্রস্তাব এল খোদ কৌশিকের পরিবারের থেকেই। কমলবাবু ও তাঁর স্ত্রী রিনাদেবীর কথায়, ‘‘আমাদের মেয়ের সঙ্গে উকিলবাবুর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন উকিলবাবুর বাবা নিজেই।’’ প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল তাঁদের। কমল বলেন, ‘‘আমি দরিদ্র দিনমজুর। অত বড় অভিজাত পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে পারব ভাবিনি কোনও দিন। বিয়ের সমস্ত খরচও তাঁরাই করেছেন।’’
সোমবার বিয়ে হয়েছে। ১৯ মার্চ প্রীতিভোজ। সেদিন প্রায় তিন হাজার আমন্ত্রিত থাকছেন। কৌশিকবাবু জানালেন, ‘‘আমি এমন মেয়েই বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, যার বাবার বিয়ে দেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। সেটা করতে পেরেছি।’’ কৌশিকবাবুর দুই বোন দীপিতা ও প্রণিতা বলেন, ‘‘দাদা পণ না নিয়ে ও এমন পরিবারে বিয়ে করুক, সেটা আমরাও চাইছিলাম। এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।’’ আলিপুরদুয়ার বার অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী সুহৃদ মজুমদারও জানান, কৌশিকের এই কাজে তিনি গর্বিত।
কৌশিকের বন্ধু পেশায় শিক্ষক প্রিয়রঞ্জন সরকারও বললেন, ‘‘অনেকেই মুখে অনেক কথা বলেন। কাজে করে দেখাতে পারেন না। কৌশিক সেটাই করল। ওর বন্ধু হিসেবে আমিও গর্বিত।’’