Gunman in School

ঢুকতে-বেরোতে পুলিশ, বন্দুকধারীর তাণ্ডবের পর মালদহের সেই স্কুলে এখনও কাটেনি আতঙ্ক

বুধবার সপ্তম শ্রেণির ক্লাসে ঢুকে শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরেছিলেন দেব বল্লভ নামে স্থানীয় এক যুবক। সেই আতঙ্কের ছাপ এখনও রয়েছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের চোখেমুখে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১৫
Share:

বুধবারের ঘটনার পর স্কুলে এখন পুলিশি নিরাপত্তা। — নিজস্ব চিত্র।

আতঙ্কটা এখনও কাটেনি। বুধবারই ভয়ানক সেই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে মালদহের মুচিয়ার চন্দ্রমোহন হাই স্কুল। অস্ত্র হাতে ক্লাসে ঢুকে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। দিয়েছিলেন খুনের হুমকি। তার পর এক পুলিশকর্তার তৎপরতায় ধরাও পড়ে যান। কিন্তু স্কুলে আতঙ্কের রেশ রয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারও। গেটে বসেছে পুলিশ পিকেট। স্কুল থেকে ঢুকতে-বেরোতে চলছে কড়া নজরদারি। পড়ুয়া থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা— সকলের মুখেই আতঙ্কের ছাপ। এক তৃতীয়াংশেরও কম ছাত্রছাত্রী এসেছে বৃহস্পতিবার। আতঙ্কের কথা মেনে নিয়েছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক। স্কুলে গিয়েছেন জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরা।

Advertisement

বুধবার দুপুরে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল মুচিয়া এলাকার ওই চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে। সপ্তম শ্রেণির ক্লাসে ঢুকে শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরেছিলেন দেব বল্লভ নামে স্থানীয় এক যুবক। তাঁর পিঠে ছিল ব্যাগ। হাতে ছিল পেট্রল বোমা। আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে তিনি সকলকে খুন করার হুমকি দিচ্ছিলেন। বছর আটচল্লিশের ওই যুবককে পরে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ঘটনার পর এক দিন কেটে গেলেও আতঙ্কের ছাপ রয়ে গিয়েছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের চোখেমুখে। বুধবার সেই সময় বাংলার ক্লাস নিচ্ছিলেন প্রতিভা মোহন্ত। আচমকাই ক্লাসে ঢুকে পড়েন দেব বল্লভ নামের ওই যুবক। বুধবারের প্রসঙ্গ তুলে প্রতিভা বলেন, ‘‘গত কাল ক্লাসে ছিল ৭১ জন। আজ উপস্থিত মাত্র ১৭ জন। আমরা স্কুলের তরফে থেকে সকলকে বোঝাচ্ছি যে, ভয় নেই। প্রশাসনের তরফেও আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। তবে আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।’’

আতঙ্ক কাটেনি পড়ুয়াদেরও। বুধবার যে ক্লাসে ওই বন্দুকধারীর মিনিট পঁয়তাল্লিশেক ছিলেন, সেই ঘরেই ছিল সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া পূজা মণ্ডল। বৃহস্পতিবার সে বলে, ‘‘যখন লোকটা ওই ভাবে ঢুকেছিল তখন আমাদের খুব ভয় লাগছিল। সে জন্য আজ অনেকে আসেনি। আমারও আসতে আজ ভয় করছিল। মা বলল, কিছু হবে না, তাই এসেছি।’’

Advertisement

নিরাপত্তার অভাব বোধের কথা মেনে নিয়েছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক স্বাগতম সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আমি ১২ বছরের বেশি এই স্কুলে আছি। এত দিন কোনও রকম ভাবেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করিনি। কিন্তু গতকালকের ঘটনার পর আমি উদ্বিগ্ন। স্কুলে নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ বুধবারের ঘটনার পর স্কুলে যে পড়ুয়ার উপস্থিতির সংখ্যা কমেছে তা-ও জানিয়েছেন স্বাগতম। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার স্কুলে উপস্থিত ছিল ৬৫২ জন পড়ুয়া। সেই জায়গায় বৃহস্পতিবার মাত্র ২০৪ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের প্রতিনিধিরা ওই স্কুল পরিদর্শন করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করানো হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানশিক্ষক।

এই ঘটনার পর সতর্ক জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, স্কুল চলাকালীন গেট বন্ধ রাখা, সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে। পাশাপাশি, জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জেলা শিক্ষা দফতর, জেলাশাসক নিতিন সিংহানিয়া-সহ প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করে প্রতিটি স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করতে কী ধরনের পদক্ষেপ করা প্রয়োজন তা আলোচনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন