চুরি ঠেকাতে আরজি পার্টি গড়ে রাত পাহারার ব্যবস্থা করেছেন ব্যবসায়ীরা। থানা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রাজ্য সড়কের ধারে ওই বাজার এলাকায় পুলিশও নিয়মিত টহলও দেয়। কিন্তু পুলিশ ও আরজি পার্টির চোখে ধুলো দিয়ে একই রাতে তিনটি দোকানে চুরি চুরি পালাল দুষ্কৃতীরা। মালদহের চাঁচল থানার পৌড়িয়া বাজারে রবিবার ভোররাতে ওই চুরির ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে আরও দু’টি দোকান ও বাজার লাগোয়া একটি বাড়িতে ঢুকেও চুরির চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। রাত পাহারার মধ্যেও বাজারে একাধিক ওই চুরির ঘটনায় চাঞ্চল্যের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। দুষ্কৃতীরা দোকানের পিছন দিক দিয়ে উপরে উঠে টিনের ছাদ কেটে ভিতরে ঢুকে চুরি করে পালিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ভাবে পিছন দিক দিয়ে ঢুকে টিনের ছাদ কেটে চুরি হয়েছে তাতে আরজি পার্টিরও কিছু করার ছিল না। পুলিশের পক্ষেও বাজারের প্রতিটি দোকানের পিছনে টহল দেওয়া সম্ভব নয়। যাইহোক পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, চাঁচল-আশাপুর রাজ্য সড়কের দুপাশে পৌড়িয়া বাজারে ছোটবড় মিলিয়ে ৮৫টি দোকান রয়েছে। ওই বাজারে আগেও একাধিকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। তাই মাস ছয়েক আগে ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে আরজি পার্টি তৈরি করে রাত পাহাড়ার ব্যবস্থা করেন। সপ্তাহে এক দিন করে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে রাত পাহারায় যোগ দিতে হয়। শনিবার রাতেও বারো জন বাজারে পাহাড়ার দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিদিনের মতো রাত তিনটে পযন্ত পাহারা দিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। তার পর এ দিন সকালে চুরির বিষয়টি নজরে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
পাহারা চলার সময়েই চুরির ঘটনাগুলি ঘটেছে নাকি তারা ফিরে যাওয়ার পর তা নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি ধন্দে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। কেননা যে দোকানগুলিতে চুরি হয়েছে ও চুরির চেষ্টা হয়েছে তা পাশাপাশি নয়। ফলে রাত পাহারা শেষ হওয়ার পরেই চুরির ঘটনাটি ঘটে বলে সন্দেহ পুলিশের।
পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার দু’পাশে পূর্ত দফতরের জায়গার উপরে বাজারটি হওয়ায় দোকানঘর পাকা হলেও প্রায় প্রত্যেকটি দোকানেই টিনের চাল রয়েছে। ছাদের নীচে বাঁশ বা চাটাইয়ের সিলিংও রয়েছে। পিছন দিক দিয়ে উঠে ছাদের টিন কেটে বাঁশ ও চাটাইয়ের সিলিং ভেঙে দোকানে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। যে দোকানগুলিতে চুরি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সঞ্জয় দাসের পোশাক বিক্রির দোকান, কৃষ্ণপদ দাসের মোবাইল ও আখতার আলির দর্জির দোকান। সফিকুল আলম ও মনোয়ারুল ইসলামের মোবাইলের দোকানে টিনের ছাদ কেটে ঢুকে গেলেও মাঝে দেওয়াল থাকায় চুরি করতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। একই রাতে দুষ্কৃতীরা হানা দেয় বাজার লাগোয়া একটি বাড়িতে। ওই সময় বাড়িতে পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন রিমা বিবি। তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। কিন্তু লোহার শিক ঢুকিয়ে দুষ্কৃতীরা দরজা খোলার চেষ্টা করতেই তিনি জেগে উঠে চিৎকার করায় তারা পালিয়ে যায় বলে দাবি।
বস্ত্র ব্যবসায়ী সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘রাতে পাহারা সত্ত্বেও এমন ঘটবে ভাবতেই পারছি না।’’ পৌড়িয়া বাজার উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘যে ভাবে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে তাতে আমরা আতঙ্কিত। পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরুক এটাই চাই।’’