তামাকের দর কমায় দুশ্চিন্তা কোচবিহারে

কমে গিয়েছে তামাকের বাজার দর। তাই চিন্তার ভাঁজ কোচবিহারের চাষিদের কপালে।কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার দিনহাটা, সিতাই, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ, শীতলখুচির বিস্তীর্ণ এলাকায় মোতিহারি ও জাতি তামাকের চাষ হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৪
Share:

কমে গিয়েছে তামাকের বাজার দর। তাই চিন্তার ভাঁজ কোচবিহারের চাষিদের কপালে।

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার দিনহাটা, সিতাই, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ, শীতলখুচির বিস্তীর্ণ এলাকায় মোতিহারি ও জাতি তামাকের চাষ হয়। জেলায় গড়ে ২০ হাজার হেক্টর এলাকায় ফি বছর তামাকের চাষ হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পাতার আকারও ভাল হয়েছে। নিয়মমাফিক মার্চের শুরু থেকে তামাক পাতা তোলার কাজও শুরু হয়। ইতিমধ্যে ওই কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, পাতার আকার ভাল হলেও এবছর বাজারে দাম কমেছে।

গত বছর জেলায় গুণগত মানের নিরিখে জাতি তামাকের দাম ছিল কুইন্ট্যাল প্রতি ৬৫০০-৭০০০ টাকা। এবার ওই তামাকের দাম দাঁড়িয়েছে কুইন্ট্যাল প্রতি ৪৫০০-৫০০০ টাকা। অন্যদিকে গতবছর মোতিহারি তামাকের দাম ছিল প্রতি কুইন্ট্যাল ৪,০০০-৬০০০ টাকা। এবার তা হয়েছে ২,৫০০-৪,০০০ টাকা প্রতি কুইন্ট্যাল। দ্রুত দাম না বাড়লে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন চাষিদের একাংশ। পরিস্থিতির জেরে সরকারি উদ্যোগে চাষিদের থেকে তামাক কেনার দাবি উঠেছে। এ নিয়ে যুযুধান দলগুলির ভোট তরজাও প্রকাশ্যে এসেছে।

Advertisement

কোচবিহার জেলা আলু-ধান-পাট চাষি সংগ্রাম কমিটির কর্তাদের অভিযোগ, এবারে উৎপাদন ভাল হয়েছে। কিন্তু বাজারে তামাকের চাহিদা কম। বাইরের রাজ্য কিংবা বিদেশে তামাক রফতানির ব্যাপারেও কোনও পরিকল্পনা নেই। সেই সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ইচ্ছেমত দর নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কমিটির সম্পাদক নৃপেন কার্জি বলেন, “লক্ষাধিক চাষির ওই সমস্যা মেটাতে সরকারি উদ্যোগে তামাক কেনা দরকার।”

ব্যবসায়ীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন। চাহিদার তুলনায় বাজারে যোগান বেশি বলে দাম কিছুটা কম রয়েছে। তাছাড়া গত মরসুমে তামাক কিনে শেষদিকে ভাল দাম না পাওয়ায় অনেকেই সেসব বিক্রি করতে পারেননি। তাদের অনেকেই নতুন করে তামাক কেনার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সদস্য তথা দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাণা গোস্বামী বলেন, “এ বারে অন্তত কুড়ি শতাংশ উৎপাদন বেশি হয়েছে। কিন্তু গত মরসুমে মজুত করা তামাক, ব্যবসায়ীদের অনেকে বিক্রি করতে না পারায় চাহিদা কিছুটা কম। পরে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

অবশ্য চাষিদের উদ্বেগ তাতে কমছে না। দিনহাটার বাসিন্দা আব্দুল মিঁয়া বলেন, “১১ বিঘা জমিতে মোতিহারি তামাকের চাষ করেছি। পাতা তুলে শুকোনোর কাজ হচ্ছে। দাম কম থাকায় শেষ পর্যন্ত উৎপাদন খরচ তুলতে পারব কিনা তা নিয়েই চিন্তা হচ্ছে।” দিনহাটার বাসিন্দা আব্দুল রহমান বলেন, ‘‘সার, কীটনাশক থেকে পরিচর্চার খরচ বেড়েছে। কিন্তু দাম কমেছে। কবে দাম বাড়বে সেই ভরসায় থাকব কি করে?’’ কয়েকজনের অভিযোগ, মেখলিগঞ্জ এলাকায় সাম্প্রতিক শিলাবৃষ্টিতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিধানসভা ভোটের মুখে প্রচারে এসেছে এই বিষয়টিও। তামাকের দাম পড়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। অন্যদিকে চাষিদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি সব্জির ভাল দামের কথা প্রচারে তুলে ধরছে শাসকদল। দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “তামাকের ওপর কেন্দ্রীয় সরকার চল্লিশ শতাংশ করের বোঝা চাপিয়েছে। তাছাড়া অসমে গতবার রাজ্য আলু না পাঠানোয় সেখানকার ব্যবসায়ীরাও তামাক নিচ্ছেন না। সব মিলিয়ে বাজার মন্দা।” সিতাইয়ের কংগ্রেস প্রার্থী কেশব রায় বলেন, “ তামাক চাষিদের নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকার উদাসীন থাকলে যা হওয়ার কথা, সেটাই হয়েছে।” সিপিএম নেতা তারাপদ বর্মনও একসুরে বলেন, মোদী ও মমতা কোন সরকারই এই পরিস্থিতি দায় এড়াতে পারেননা।

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “কেন্দ্রের ওপর দোষারোপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এবার জেলায় তামাকের উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে যোগান বেড়ে গিয়েছে। তাই কাঁচা তামাকের দাম পড়েছে। তামাক শুকনোর পরে এত কম দাম থাকবে না।”

তৃণমূলের দিনহাটা কেন্দ্রের প্রার্থী উদয়ন গুহ অবশ্য বলেন, “গত দশ বছরের তুলনায় এবার চাষিরা আলু, সব্জি, পাটের মত কৃষিপণ্যে বেশি দাম পেয়েছেন। সবে কাঁচা তামাক উঠছে, কিছুদিন পরে বাজারে দাম বাড়ার সম্ভাবনাও আছে।’’ মনগড়া অভিযোগ তুলে লাভ হবেনা মন্তব্য তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement