খড়্গ, দাঁতের পরে এ বার মৃগনাভি

টানা বৃষ্টিতে বনাঞ্চলে নজরদারি ঢিলেঢালা হয়ে পড়ায় চোরাশিকারিরা যে সক্রিয় হবে, তা নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেরই আশঙ্কা ছিল। তা যে একেবারে অমূলক নয়, সেটাই স্পষ্ট হল শুক্রবার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৯
Share:

টানা বৃষ্টিতে বনাঞ্চলে নজরদারি ঢিলেঢালা হয়ে পড়ায় চোরাশিকারিরা যে সক্রিয় হবে, তা নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেরই আশঙ্কা ছিল। তা যে একেবারে অমূলক নয়, সেটাই স্পষ্ট হল শুক্রবার।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের দুই প্রান্তে পশুর দেহাংশ পাচারের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে ধরা হল ৩ জনকে। উদ্ধার হল হাতির দাঁত, মৃগনাভি। ধৃতদের মধ্যে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে জলপাইগুড়ির বেলাকোবায় ধরা হয়েছে ভুটানের বাসিন্দা এক মহিলাকে। ফলে, চোরাশিকারিদের জাল যে বিদেশেও ছড়িয়ে রয়েছে, সেটাও ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়িকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলের পশুর দেহাংশ ব্যাঙ্কক, ইন্দোনেশিয়া, চিনেও পাচার হচ্ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তদন্তে বন দফতরের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পৌঁচেছে। সে জন্য বিমানবন্দর ও নেপাল-ভুটান সীমান্তে যাতায়াতের পথে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর। বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন বলেছেন, ‘‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক কিছু তথ্য মিলেছে। আমরা নজরদারি দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ সে জন্য দ্রুত বন দফতরের শূন্য পদ পূরণের প্রক্রিয়া যাতে শুরু হয়, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইবেন বনমন্ত্রী।

Advertisement

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্রেতা সেজে ফাঁদ পেতে বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারের আন্তর্জাতিক চক্রের পান্ডা সন্দেহে এক মহিলাকে ধরা হয়েছে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। ফুলবাড়ি এলাকা থেকে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করেন জলপাইগুড়ির বেলাকোবা রেঞ্জের বন দফতরের কর্মীরা৷ ধৃতের কাছ থেকে একটি হাতির দাঁত, ভারত ও ভুটান দুই দেশের ভোটার কার্ড, একটি মোবাইল, এগারোটি সিমকার্ড, পাঁচটি এটিএম কার্ড উদ্ধার হয়েছে৷

উত্তরের পাচার বৃত্তান্ত। সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত জানিয়েছেন, ধৃতের নাম পেমা ছোকি লামা৷ বাড়ি ভুটানের চিরাং-এ৷ ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে আন্তর্জাতিক এই চক্রটির অন্যতম পাণ্ডা হিসাবে কাজ করতেন ওই মহিলা৷ সারা বছরই ভুটান ও এদেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান। একাধিকবার ব্যাঙ্কক, ইন্দোনেশিয়া সহ কিছু দেশেও গিয়েছেন৷ এই চক্রের জালও বহু দূর বিস্তৃত বলে বন আধিকারিকদের সন্দেহ৷

কিছু দিন আগেই পেমার কথা জানতে পারেন বন দফতরের আধিকারিকরা৷ তারপরই ফাঁদ পাততে শুরু করেন৷ নিজেদের ক্রেতা হিসাবে পরিচয় দিয়ে গণ্ডারের খড়্গ পেমার থেকে কিনতে চান বন দফতরের কর্মীরা৷ দিন কয়েক আগে ফাঁদে পা দেন পেমা৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফুলবাড়িতে গণ্ডারের খড়্গর জন্য অগ্রিম নিতে আরও দুই পাচারকারীকে নিয়ে আসেন পেমা৷ সেখানে বনদফতরের আধিকারিকদের একটি হাতির দাঁত দেখিয়ে বলেন, সেটি নেপালে নিয়ে যাচ্ছেন৷ এরপর আর দেরি করেননি বন দফতরের কর্তারা৷ সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেফতার করে নেন তাঁরা৷ তাঁর দুই সঙ্গী অবশ্য পালিয়ে যায়৷

ঘটনাচক্রে, ওই রাতেই দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট সীমান্তে হানা দিয়ে পুলিশ ৪টি মৃগনাভি (কস্তুরি) উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১ জনকে। বালুরঘাট থানা থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে শালগ্রাম সীমান্তের ঘটনা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বালুরঘাট থানার আইসি সঞ্জয় ঘোষের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে আশিস ওরফে দেবাশিস দাস নামে বাংলাদেশের বাসিন্দা ওই পাচারকারীকে ধরে ফেলে। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হরিণের দেহাংশ ওই চারটি মৃগনাভি। ধৃত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাটোরের বাসিন্দা। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণীর দেহাংশ পাচারের একটি বড় চক্র কাজ করছে। ওই চক্রের হদিশ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন